দেশজুড়ে

৫০ কোটি টাকা নিয়ে পলাতক ব্যাংক কর্মকর্তা

কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংক শাখায় কর্মরত সাইফুল ইসলাম নামে একজন ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’, প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে পলাতক। বিভিন্ন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পেলে গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে অনেক গ্রাহককে ব্যাংকে ভিড় করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ তাদের ব্যালেন্স চেক করে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরে গেলেও, অনেক গ্রাহক তাদের ব্যালেন্স শূন্য এবং বন্ধ দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তদন্তের পর জানা গেছে যে, সাইফুল ইসলাম রাঢ়িনী মোহাম্মদপুরের বাশিলা (হাউস হোল্ডিং নম্বর ৯৯/১) এলাকার সোহাগের মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে।
ব্যাংকের অডিট তদন্তের প্রধান রেজাউল কবির বলেছেন যে, কোনও গ্রাহকের টাকা খোয়া যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। গ্রাহকরা ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী তাদের টাকা ফেরত পাবেন। তবে ব্যাংক থেকে ঠিক কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। এদিকে, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ১৫০ থেকে ২০০ জনেরও বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সুমন নামে এক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে ১.১ কোটি টাকা ছিল কিন্তু আজ তিনি এসে দেখেন যে অ্যাকাউন্টটি খালি। ঘাটারচরের নুরুদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বলেন যে, ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ছিল কিন্তু এখন মাত্র ৪ হাজার টাকা আছে। তবে, অ্যাকাউন্টটি কীভাবে খালি হল তা তিনি জানেন না। অন্যদিকে, গ্রাহক নজরুল ইসলাম বলেন যে, তার অ্যাকাউন্টে ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা ছিল কিন্তু তিনি তা থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি এসএমএস পেয়েছিলেন। পরে তিনি জানতে পারেন যে অন্য অনেকের মতো তার টাকাও উধাও হয়ে গেছে।
এছাড়াও, তার মেয়ে জানিয়েছেন যে, বসিলার মোক্তার হোসেন মুক্তির ৩টি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। আরেক গ্রাহক আঁখি আক্তার বলেন, যদিও তার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও টাকা তোলা হয়নি, তবুও অন্যান্য গ্রাহকদের টাকা উধাও হয়ে গেছে। আমরাও চিন্তিত যে আমাদের টাকাও কখন উধাও হয়ে যাবে।
ব্যাংকের তহবিল আত্মসাতের বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র হাজদার বলেন, অনুমতি ছাড়াই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, ঘটনাটি নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও সম্মতি বিভাগে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অডিট টিম ইতিমধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু আমাদেরকে বলেন, “ঘটনাটি শোনার পর আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি। কিন্তু ব্যাংক থেকে কেউ মামলা করতে আসেনি। আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। ব্যাংকের লোকেরা পরে মামলা দায়ের করার কথা জানিয়েছেন।”