• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু, কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য খুঁজছে বিএনপি

    আন্দোলন কর্মসূচিতে কীভাবে এবং কী ধরনের বৈচিত্র্য আনা যায় তা নিয়ে ভাবছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দীর্ঘ অবরোধ বা হরতাল মানুষের মধ্যে একঘেয়েমি তৈরি করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে শিথিলতা থাকতে পারে। আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে কর্মসূচি জোরদার করতে চায় দলটি।

    তাই বর্তমানে সক্রিয় নেতাদের এসব কর্মসূচি ছাড়াও আর কী করা যায় তা ভাবতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক শীর্ষ নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

    গত সপ্তাহের হরতাল-অবরোধের পর রোববার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। এরপর বুধ ও বৃহস্পতিবার একদিনের বিরতি দিয়ে হরতাল বা অবরোধ করতে পারে দলটি।

    আগামী সপ্তাহে কী কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। তবে অবরোধে মিছিলের পাশাপাশি পিকেটিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

    নতুন কর্মসূচি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবন অবরোধ, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

    তবে অধিকাংশ নেতাই অসহযোগ কর্মসূচিকে যথাযথ মনে করেন না বলে মত প্রকাশ করেন।

    দলের কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রাখা নেতারা বলেন, দেশে এখন অসহযোগ আন্দোলনের কোনো পরিস্থিতি নেই। সরকারের সাথে অসহযোগিতা এবং কাজে না যাওয়া, কলকারখানা বন্ধ বা অফিস-আদালত বন্ধ করার মতো কিছু নেই। আর গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও করতে হলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে জড়ো করতে হবে। গ্রেফতার এড়াতে দায়িত্বশীল নেতাদের কভার করাও কঠিন।

    তবে ঢাকার প্রবেশপথে অবরোধ কর্মসূচির প্রস্তাব পুরোপুরি নাকচ করেননি নীতিনির্ধারকরা।

    বৈঠকে নেতারা তাদের মতামত জানিয়ে বলেন, গত ২৮ অক্টোবর যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং পরবর্তীতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর কঠোর কর্মসূচি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। . তারা মনে করেন, ২৮ অক্টোবর সরকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপিকে হরতাল-অবরোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন তফসিল ঠেকাতে বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করতে হবে। নেতাদের কারো কারো মতে, অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে হরতাল দেয়া যায়।

    গত সপ্তাহে একদিনের হরতাল ও তিনদিনের অবরোধকে দলের নীতিনির্ধারকরা মূল্যায়ন করছেন, কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাড়া পড়েছে। মানুষ দোকানপাট খোলেনি। খুব কমই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হন। কিন্তু দীর্ঘ দিন এ ধরনের কর্মসূচি থাকলে মানুষ জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হবে। সেক্ষেত্রে কর্মসূচি হবে শিথিল।

    তবে আজ থেকে অবরোধ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভার্চুয়াল সমন্বয় সভা করেছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। মিছিলের পাশাপাশি পিকেটিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

    বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা কঠোর কর্মসূচি থেকে পিছপা হব না।

    শুরু হয় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

    বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টায় অনুষ্ঠান শেষ হবে। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামী দুই দিন আবারও কর্মসূচি শুরু হবে। জামায়াতে ইসলামীও দুই দিনের অবরোধ ডেকেছে। বিএনপির সমমনা দলগুলোও অবরোধে সমর্থন ঘোষণা করেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে অবরোধের পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে হরতাল পালন করবে দলটি।

    যাদের গ্রেপ্তারের কারণে নতুন দায়িত্ব রয়েছে

    দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গ্রেফতার করায় তাদের অনুপস্থিতিতে কারা দায়িত্ব নেবেন তা জানিয়ে দিয়েছে দলটি। বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর সেলের সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মওদুদ হোসেন আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন কারাগারে থাকায় তার জায়গায় কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে। নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীকে আটক, কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

    কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন কারাগারে রয়েছেন। কমিটির সহসভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারকে।