৪৩ জেলায় তাপপ্রবাহ, গরমে ধুঁকছে মানুষ
চৈত্রের শুরুতে ছিল ঝড় মেঘ। ক্যালেন্ডারে বৈশাখের পাতা খুলতে আর কয়েকদিন বাকি। এদিকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। বিদায়ের সময় চৈত্র তার আসল রূপ দেখায়। প্রখর রোদ আর প্রচন্ড গরমে চারিদিক। গতকাল রোববার তাপপ্রবাহ ৪৩ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টির অভাবে আরও কয়েক সপ্তাহ মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ভারী বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে; তাও আগামী চার-পাঁচ দিনের আগে নয়।
থার্মোমিটার ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেড়ে গেলে আবহাওয়াবিদরা এটিকে হালকা তাপপ্রবাহ বলে। যদি তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বৃদ্ধি পায় তবে এটিকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায় তখন তাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ।
এপ্রিলের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে এই মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও, মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন উজানের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি এবং দুই দিনের প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাপপ্রবাহে মানুষ হাঁপাচ্ছে। প্রখর রোদে ছাতা নিয়ে বের হওয়া। মাথায় গামছা বেঁধে প্রখর রোদে কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ, যাদের এই তীব্র গরমে রাস্তায় কাজ করতে হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। আগের দিন শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। তিনি বলেন, “শীঘ্রই তাপ কমছে না। তাপ আরও কয়েকদিন চলবে। তবে বৃষ্টি হলে বা আকাশ মেঘলা থাকলে জ্বর কমবে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০২১ সালে একটি সমীক্ষা চালায়, যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় যে ঢাকায় তাপপ্রবাহ বা তাপপ্রবাহের প্রবণতা বাড়ছে। আর তাপপ্রবাহের কারণে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বৃদ্ধ, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, ক্রীড়াবিদ এবং বাইরের শারীরিক কার্যকলাপে জড়িতরা তাপপ্রবাহের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। যারা সরাসরি সূর্যের আলোতে কাজ করেন তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে ২৬ বছর পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেদিন তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।