• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ৩৫ জেলায় কোনও আইসিইউ নেই

    দেশে করোনভাইরাস সংক্রমণের সূচনা হওয়ার আগেই বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য বিভাগকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে সে অনুযায়ী খুব কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা যথেষ্ট নয়। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রোগীর চাপ অনেক বেশি। অনেক রোগীররা আইসিইউ পাচ্ছেন না। কারও আইসিইউ পেতে কয়েক দিন সময় লাগে। সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ৩৫ জেলায় রোগীরা আইসিইউ সুবিধা পাচ্ছেন না। দেশের মোট আইসিইউ বেডের ৭৬ শতাংশই ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ রাজধানীতে রয়েছে।
    করোনার সংক্রমণ শুরুর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেন। তবে সে নির্দেশাবলী কার্যকর হয়নি। ফলস্বরূপ, ঢাকার বাইরের জেলাগুলিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিভাগীয় স্তরে বা চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে ছুটে যেতে হয়। তাই অনেকে পথে মারা যাচ্ছে।
    সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইসিইউ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবলের ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলেও রাতারাতি জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে না। দক্ষ জনশক্তি ছাড়া কেবল আইসিইউ বেড স্থাপনে কোনও লাভ হবে না।
    তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের বক্তব্য সঠিক নয়। আইসিইউ চিকিৎসা পদ্ধতি একত্রিত করে। যে বিভাগের রোগীর প্রয়োজন সে বিভাগের ডাক্তার পরিষেবাটি নিশ্চিত করবেন। কেবলমাত্র পূর্ণকালীন চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীরা প্রশিক্ষণ পাবেন। দ্রুত সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব। স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীদের মোতায়েন করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
    দেশে আইসিইউ বেডের মোট সংখ্যা এক হাজার ১৫৭টি । এর মধ্যে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ৪৬৪ টি শূন্য ছিল। রাজধানীর ৮২১ শয্যাগুলির মধ্যে ৩৪৫টি শূন্য রয়েছে। রাজধানীর ৩৮৪ টি সরকারী শয্যার মধ্যে ১১৭ টি শূন্য রয়েছে।
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যাদের শ্বাসকষ্ট হয় তাদের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। এই রোগীদের আইসিইউ শয্যা, ক্যাননুলা, অক্সিজেন কনডেন্টার এবং আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন। হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন থাকলে শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের মাধ্যমে, রোগী শয্যার স্বাভাবিক প্রবেশ থেকে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সার্পোট পাবেন। তবে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য আইসিইউ প্রয়োজন।
    “কর্তৃপক্ষ বলছে আইসিইউ জনবল ছাড়া চালানো যাবে না,” তিনি বলেন। তবে জরুরী পরিস্থিতিতে ডিগ্রি সহ বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তি তৈরি ও কাজে লাগানো দরকার। এই জাতীয় প্রশিক্ষণের জন্য এক মাসের বেশি প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি সদিচ্ছার। না হয়এইভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
    একটিও আইসিইউ নেই: মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী এবং ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর; ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা ও শেরপুর; চট্টগ্রাম বিভাগ, চট্টগ্রাম জেলা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট; রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট; খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল; বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলা এবং সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় আইসিইউর বেড নেই।
    চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ১ জুন প্রথম ১৮ টি শয্যা কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের আওতায় আনা হয় পরে রোগীর চাপ বাড়ার সাথে সাথে এটি ৭২ টি শয্যা পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। তবে জেলায় আইসিইউ নেই। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
    রাজশাহী বিভাগের আরও তিন সিভিল সার্জন বলেছেন যে আইসিইউ, উচ্চ প্রবাহের অনুনাসিক কাননুলা পাওয়া গেলে স্থানীয় পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হত। তবে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।
    ৭৬ শতাংশই ঢাকায় করোনভাইরাস সংক্রমণের আগে দেশে ২৯৮ টি সরকারী আইসিইউ ছিল। গতকাল অবধি এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে 1৬৯১ টি। করোনার সময়কালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা বেড়েছে ৩৬১ জন। এবং ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় আরও ৪৬৬ টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৭টি ঢাকায় রয়েছেন।

    মন্তব্য করুন