২৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে মৃত্যু
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোনোভাবেই কমছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে ৫১টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যাটি ২৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে গতকাল একদিনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৪ জন। নতুন মামলায় এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮০২ জন।
২০০০ সাল থেকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তথ্য সরবরাহ করে আসছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জন মারা গিয়েছিল। ২০০২ সালে, স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বারা ৫৮ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরপর গত ১৫ বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫-এর নিচে। ২০১৯ সালে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৫ জন। তাদের মধ্যে ১৭৯ জন মারা গেছে।
২০১৪ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল। সে বছর, ৩৭৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, যদিও তারা মারা যায়নি। ২০২১সালে, করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ১০৫ জন মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ৩.৩০৪ জনের মধ্যে ২.২৪৭ জনই ঢাকার বাসিন্দা। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৩৯২ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
কীটতত্ত্ববিদ ও সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে এডিস মশা নিধন এবং মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। এই কাজটি বছরের শুরুতে করা উচিত। এ দুই কাজে অবহেলা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে অভিযান চালানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে সারাদেশের সিটি করপোরেশনগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু চার ধরনের। তার মধ্যে এ বছর তিন ধরনের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। কয়েকটি হাসপাতালে শয্যা সংকট রয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছে রোগীরা হতবাক হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ রোগী তিন দিনের মধ্যে মারা যায়। এই মাল্টিপল অ্যাক্টিভিজম কিছুটা বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী। মারা যাওয়া এক-তৃতীয়াংশের বয়স চল্লিশের বেশি। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ জুলজিক্যাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রথমত, এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এবং দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সিটি করপোরেশন শুরু থেকেই এডিস মশা নির্মূলে সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু জনগণকে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা শুধু কিছু শোম্যানশিপ করেছে। সারা বছর ধরে ডেঙ্গু নির্মূল কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
তিনি বলেন, সাধারণত অক্টোবরের দিকে ডেঙ্গু কমতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর অক্টোবরেও বৃষ্টি হচ্ছে, তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কমছে না। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা তথ্য পাচ্ছি না। সরকারের মতে, প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এ ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আরও ১০ দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নির্মূলে উত্তর সিটি করপোরেশন সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে এডিস লার্ভা পাওয়ায় ২০টি মামলায় মোট ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মশা নিধনে করপোরেশনও কাজ করছে, নগরবাসীকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে শামসুল কবির জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।