২২টি বিভাগের বিরুদ্ধে ৪৭টি অভিযোগ।
বেশিরভাগ সেবা সংস্হাগুলোর বিরুদ্ধে ৩০টি তাত্ক্ষণিক রেজোলিউশন, তিনটিতে অনুসন্ধানী সিদ্ধান্ত সহ
চট্টগ্রামে উন্মুক্ত গণশুনানি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২২টি সরকারি বিভাগের বিরুদ্ধে আনা ৪৭টি অভিযোগের মধ্যে ৩০টি অবিলম্বে সমাধান করা হয়েছে। তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৪ জন অভিযোগকারী শুনানিতে অংশ নেননি। এই ১৪ জনের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উন্মুক্ত গণশুনানিতে অংশ নিতে দুদকের স্থাপিত অভিযোগ বাক্সে দুই শতাধিক ব্যক্তি অভিযোগ জমা দেন। সেখান থেকে ৪৭ জনের অভিযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশির ভাগ অভিযোগই চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, পিডিবি ইত্যাদি সেবা সংস্থার বিরুদ্ধে।
দুদক সূত্র জানায়, ২২টি অফিসের বিরুদ্ধে ৪৭টি অভিযোগের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) বিরুদ্ধে ২টি, পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে ৪টি, বিআরটিএর বিরুদ্ধে ২টি, সিডিএর বিরুদ্ধে ৪টি, সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ৭টি, ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে ৩টি, এলএ শাখার বিরুদ্ধে ৩টি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৫, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ২, চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিরুদ্ধে ১, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ২, ওয়াসার বিরুদ্ধে ২, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ২, কেজিডিসিএলের বিরুদ্ধে ১, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ১, পানি উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ১ জন। বোর্ড, বিআরটিসির বিরুদ্ধে ১টি, বিটিসিএলের বিরুদ্ধে ১টি, যমুনা অয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে ১টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ১টি, জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ১টি এবং জেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে ১টি। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীরা ৭টি অভিযোগ করেন। এরপর রয়েছে জেলা প্রশাসন। সেবাপ্রত্যাশীরা ভূমি অফিস ও এলএ শাখার বিরুদ্ধে একসঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিরুদ্ধে আনা দুটি অভিযোগ নিয়ে এই উন্মুক্ত গণশুনানি শুরু হয়। মোঃ ফয়েজ আহম্মদ মিয়া ও মোঃ সাহাবুদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি এ দুটি অভিযোগ আনেন। এর মধ্যে মোঃ ফয়েজ আহম্মদ মিয়া অভিযোগে বলেন, পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামানসহ পাঁচজন বাংলাদেশ রেলওয়ের জাল ইজারা দলিল দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে রেল সচিবের কাছে অভিযোগ করলে তিনি মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপর অভিযোগকারী পাহাড়তলী হিসাবরক্ষক মো. তিনি সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে আইস ফ্যাক্টরি রোডের স্টেশন কলোনী সংলগ্ন রেলওয়ের জমিতে দোকান ও জায়গা ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন। এর মধ্যে মোঃ ফয়েজ আহম্মদ মিয়াকে অভিযোগের বিষয়ে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে. সাহাবুদ্দিনের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। দুদক কমিশনার তাকে বলেন, আপনি নিজেই অপরাধ করেছেন।
৪২তম অভিযোগটি ছিল বিআরটিসির বিরুদ্ধে। অধিদপ্তর অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট কর্তন করছে বলে অভিযোগ করেন কদমতলীর মো. আবুল মোকারম। শুনানি শেষে তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের মধ্যে একটির তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হাসান নামের অভিযোগকারীর অভিযোগ তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন তিনি অভিযোগ করেন, তার আবাসিক বাড়ি থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিল নেওয়া হচ্ছে। শুনানিতে অন্য ব্যক্তি উপস্থিত না হওয়ায় তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩৫তম অভিযোগকারী ছিলেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ কে খান কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিটার সংযোগ দিতে মোটা অংকের টাকা চান। এ বিষয়ে শুনানি শেষে ২৮ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এলএ শাখার বিরুদ্ধে ২৪তম অভিযোগ সীতাকুণ্ডের সেলিম রহমান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি দায়ের করেছেন। তার ক্রয়কৃত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। অন্যদের দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২২তম অভিযোগটি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার কয়েকজনের বিরুদ্ধেও ছিল। এ বিষয়ে শুনানিতে ডিসি বলেন, অভিযোগের নিষ্পত্তি হলে তা নিষ্পত্তি করা হবে। একুশতম অভিযোগ করেছেন নুরুল ইসলাম নামে এক কুমোর তার কাছ থেকে তহসিলদার জসিম উদ্দিন ও সার্ভেয়ার মো. মশিউর ঘুষ নিয়েছেন- এমন অভিযোগ তার। এ বিষয়ে শুনানি শেষে দুদক কমিশনার ডিসিকে তহসিলদারের খোঁজখবর নিতে বলেন। একপর্যায়ে ডিসি দুদক কমিশনারকে আশ্বস্ত করেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩১তম অভিযোগ দায়ের করেছেন ৮৭ বছর বয়সী নূর চেহের বেগম নামে এক নারী। অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে শুনানিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জেলা প্রশাসনের।