২০৩০ সালে, চাল উৎপাদন ৩৬ লাখ টন হ্রাস পাবে
জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সেচের পানির অভাবসহ নানা প্রতিকূলতা বাড়লে ২০৩০ সালের মধ্যে চালের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় ৩৬ লাখ টন কম হবে। ২০৩০ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ধান ও গমসহ ২৮টি ফসলের ভবিষ্যৎ চাহিদা ও সরবরাহ মূল্যায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ফার্মগেটে বিএআরসি অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ ও ২০৫০ সালে চালের চাহিদা হবে যথাক্রমে ৩.৯১ কোটি ও ৪২.৬ কোটি টন। উৎপাদন দাঁড়াবে ৪.১০ কোটি এবং ৫.২১ কোটি টন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অব্যাহত থাকলে এই উৎপাদন যথাক্রমে ৩.৫৪ কোটি ও ৪.০৬ কোটি টনে নেমে আসবে। অন্য কথায়, ২০৩০ সালে সরবরাহ ঘাটতি হবে প্রায় ৩৬ লাখ টন এবং ২০৫০ সালে ১৯ লাখ টন। ২০২১ সালে চালের চাহিদা ছিল ৩.৫২ কোটি টন, যার বিপরীতে স্থানীয় সরবরাহ ৩.৫৬ কোটি টন হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সরবরাহ ছিল ৩ কোটি ৪৫ লাখ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতির কারণে ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল আমদানি করতে হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য গ্রহণের তালিকা ধীরে ধীরে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে। যদিও বেশিরভাগ ক্যালোরি শস্য থেকে আসে, মোট ক্যালোরি গ্রহণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ধরনের গবেষণা খুবই প্রয়োজন। ধান ও গমসহ বিভিন্ন ফসলের চাহিদা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে হলে সঠিক পরিকল্পনা করা সম্ভব। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে গবেষণাকে আরও নির্ভুল করতে নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভুট্টা ও
গমের চাহিদা স্থির নয়। বর্তমানে ভুট্টার চাহিদা ৬৫ লাখ টন, যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৫৫ লাখ টন এবং আমদানি হচ্ছে ১০ লাখ টন। কিন্তু গবেষণায় বলা তথ্য এবং বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, সরিষার তেলের চাহিদা ক্রমশ বাড়লেও নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে তা মেটানো যাচ্ছে না। মসলার মধ্যে এ সময়ে শুধু পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও আদা, রসুন, গোলমরিচ, হলুদের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম থাকবে। ডালের ক্ষেত্রেও তাই হবে। তবে চাহিদার তুলনায় সবজির উৎপাদন বেশি হবে এবং ফলের উৎপাদন বাড়লেও সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।
বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ঘাটতি মেটাতে উন্নত জাতের বীজের ব্যবহার বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার, ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বদা ১-২ মিলিয়ন টন চাল মজুদ রাখা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। উৎপাদিত ফসল, কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থা। গবেষণায় আধুনিকায়নকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।