১৭ নারীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক, পদ হারালেন বন কর্মকর্তা
যেখানে বদলি আছে, সেখানে বিয়ে আছে। এভাবে ১৭ জন নারীকে বিয়ে করার জন্য দেশব্যাপী আলোচিত বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, কবির হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান মিয়াকে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বরখাস্তের আদেশের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি ইমেল পেয়েছেন। এছাড়াও, একই দিনে কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু নিজ উদ্যোগে মেট্রোপলিটন প্রথম প্রশাসনিক আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মো. সাদিক আহমেদ মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। অভিযোগ করা হয়েছে যে, বন কর্মকর্তা বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি প্রদান, বিমানসেনা হিসেবে সুযোগ প্রদান অথবা সম্পত্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করে আসছিলেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে তিনি ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ এবং বাগেরহাট সহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অবস্থায় ১৭টি বিয়ে এবং বিবাহ জালিয়াতি করেছেন। মামলার বাদী অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু বলেন, বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা। তিনি এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ এবং বাগেরহাট সহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অবস্থায় ১৭টি বিয়ে এবং বিবাহ জালিয়াতি করেছেন। তিনি বলেন, “অভিযুক্ত কবির হোসেন পাটোয়ারী প্রতিটি বিয়েতে মুসলিম পরিবার আইন, ১৯৬১ এর ধারা ৬ এর বিধান লঙ্ঘন করে অধ্যাদেশের ৬ (৫) (খ) ধারার অপরাধ করেছেন। এছাড়াও, প্রথম বিয়ের পর তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক ১৭টি বিবাহ আয়োজন করেছেন, গুরুতর অপরাধ করেছেন।” আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রাজীব মজুমদার বলেন, অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবুলের দায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ২০ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা কবির হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, গত ১১ সেপ্টেম্বর কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিচার দাবিতে বরিশাল শহরের কাশিপুর বন সংরক্ষক কার্যালয়ের সামনে নির্যাতিত নারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এক ঘন্টা ধরে মানববন্ধন করেন। এ সময় ঢাকাবাসী নাজনীন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার দোলনসহ ১৭ জন নারী তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।