শিক্ষা

হিজাব আন্দোলনের তাবাসসুম কর্ণাটকে দ্বাদশে প্রথম  হয়েছে

ভারতের কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনের অন্যতম মুখ তাবাসসুম আবারো আলোচনায় ফিরেছেন গণমাধ্যমে। দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে আবারও গণমাধ্যমের নজর কেড়েছেন ১৭ বছরের তরুণী তাবাসসুম শাইক। তিনি ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৩ নম্বর পেয়েছেন। ফলস্বরূপ, হিজাব আন্দোলনের ফলাফল এবং তাবাসসুমের সাফল্যকে কেন্দ্র করে কর্ণাটকের আলোচনায় ফিরে এসেছে হিজাব আন্দোলন।

বাবা আব্দুল খাইয়ুম শেখ অনেক চেষ্টার পর মেয়ের নাম রাখেন তাবাসসুম। তিনি পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার। আরবি ভাষায় ‘তাবাসসুম’ শব্দের অর্থ হাসি। মা পারভীন একজন গৃহিণী। চার বছরের বড় দাদা আবদুল কালাম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।

এমন সাফল্যের পর গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাবাসসুম বলেন, “একবার প্রতিবাদে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ বাসায় বসে থাকি। এক সময় মানসিক চাপ নিতে পারিনি। তখন অভিভাবকরা বলেছিলেন, কোনো শর্ত থাকা উচিত নয়। শিক্ষার উপর চাপিয়ে দেওয়া। পড়ালেখা বন্ধ করা ভবিষ্যতের প্রতি অবিচার করবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে কারণ মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরার অনুমতি না দিলে লেখাপড়া ছেড়ে দেবে। প্রতিবাদের নামে পড়ালেখা বাদ দিলে উদ্দেশ্য পূরণ হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা। তাই, আমার বাবা-মায়ের পরামর্শে, আমি স্কুলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পরীক্ষার আগে সবকিছু ভুলে যাব। অনেক সহপাঠী কিচিরমিচির করছিল। সুযোগ পেলেই সে মুসলিম মেয়েদের সাথে ঘুষি মারতো। ক্লাসে হিজাব, ক্লাসের বাইরে।

মেয়েটির কথায়, “আমি সব মুখ বুঝেছি এবং সহ্য করেছি। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকেই হিজাব পরি। আমি পোশাক পছন্দ করি। একটি অধিকার জন্মেছিল। তাই হিজাব না পরে স্কুলে যাওয়া খুব কঠিন ছিল।”

প্রসঙ্গত, গত বছরের মাঝামাঝি কর্ণাটক বিজেপি সরকার ১২ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করে। এর ফলে রাজ্যজুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের কট্টর হিন্দু-মুসলিম ছাত্ররা বিপরীত পথ ধরল। মুসলিম মেয়েদের স্কুল বয়কট প্রতিবাদের প্রধান স্রোত হয়ে ওঠে। স্কুলে ধর্মীয় পোশাক হিসেবে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। অনেকেই তাদের মেয়েদের দূরশিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি করে। হাজার হাজার মুসলিম মেয়ে পরীক্ষা বর্জন করেছে। কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।

তাবাসসুম বলেন, এবার তিনি কলেজে ভর্তি হবেন, হয়তো কলেজে কোনো কঠোর ড্রেসকোড নেই, কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিক থেকে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায়ও পোশাকের স্বাধীনতা থাকবে কিনা সন্দেহ। তাই আপাতত তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি পড়ার জন্য একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তাবাসসুমের প্রশ্ন, ‘একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাকের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকবে কেন? শিক্ষা আমার অধিকার, ধর্মও আমার অধিকার।

মন্তব্য করুন