হঠাৎ সুর বদল, গোপন জায়গা থেকে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা
ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর সব এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও পালিয়ে যান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই সমর্থন করেননি সুমন। এ ছাড়া, সরকার পতনের আগের দিনগুলোতে ছাত্রদের গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। বিশেষ করে গত ৪ আগস্ট ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উদ্দেশে সুমনের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
৪ আগস্ট থেকে সুমনকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে না। সে বাংলাদেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে গত সোমবার রাতে সুমন তার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তবে ভিডিও বার্তায় তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য হিসাবে, আমি আপনাদের মধ্যে যারা আমার সমর্থক বা শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা আমাকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই। আমি সবসময় এই কোটা সংস্কার বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন আমি তাদের পক্ষেও ছিলাম। কিন্তু আমার ব্যর্থতা এটা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া নয়। এ জন্য আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার জন্য আমি সকল সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
তিনি বলেন, “আপনারা এখন যে কাঠামোগত সংস্কার চাইছেন, কিন্তু আমি বহু বছর ধরে এই সংস্কারের জন্য কাজ করছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার দুই-তিন জনের মধ্যে, আমাকেও খুঁজে পেতে পারেন। আমি এস আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের বাদী হিসেবে একটি মামলাও করেছি।
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তার আমেরিকায় ৯টি বাড়ি নিয়ে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমি তার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে কথা বলেছি, সালাম মুর্শেদীর নামে মামলা করেছি, কাজী সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ওসি) মোয়াজ্জেম, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমার জীবনে কতটা ঝুঁকি ছিল জানেন। কোটা আন্দোলন শুরুর দুই সপ্তাহ আগে আমার জীবন ঝুঁকির মুখে বলে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তাই আমি সবসময় এই যুদ্ধে চেষ্টা করেছি। এখন যে যুদ্ধ আপনারা শুরু করেছেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এই যুদ্ধের জন্য আমি সর্বদা প্রার্থনা করি। আমি সবসময় আমার জায়গা থেকে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করব।
তবে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা পোস্ট করার পরই ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। অধিকাংশ মানুষ তার সমালোচনা করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
একজন বললেন, ‘আপনি কখনো ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন না। দুমুখো সাপের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। লজ্জা থাকলে এই মুখ নিয়ে সাফাই গাইতে আসতেন না। মিথ্যাবাদী।’
আরেকজন বলেন, আপনি নিজেকে শেখ হাসিনার দালাল পরিচয় দিয়ে গর্বিত ছিলেন। এই খুনি হাসিনা বিভিন্ন সময়ে এত মানুষ খুন করেছে, আয়নার ঘরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে, আপনি এইটা জানতেন, কিন্তু নীরব! তাই এখন জনসমর্থন পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।