‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার মূল হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার মূল হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ । ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সোসাইটির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩ উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করাই এই মেলার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। একটি স্মার্ট বাংলাদেশ এবং একটি স্মার্ট জাতি গড়ে তোলাই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকার সরকারি বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবোটিক্স এবং বিগ ডেটাসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়।
তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।
ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশে বিপ্লব করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর সিতরাং সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে বহুমুখী সক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বসাতে যাচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি ব্যান্ডউইথের ক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বসানোর পর এটি বেড়ে ১৩,২০০ Gbps হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দিয়ে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে ইউনিয়ন স্তর পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৯৫৬,২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার তারগুলি স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে, প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জিবি ধারণক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে যা জনগণ এবং সরকারী অফিসগুলিতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, সারাদেশে মোট ৮৬০০টি ডাকঘর ডিজিটাল করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বিভাজন এবং মূল্যের পার্থক্য দূর করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক আনার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সারা দেশে ‘এক দেশ, এক হার’ একটি অভিন্ন শুল্ক চালু করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম সেক্টরে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বক্তব্য দেন।