শিক্ষা

স্বপ্নের লন্ডনে স্বপ্ন ভঙ্গের দহনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা স্বপ্নের লন্ডনে পা রেখেই স্বপ্ন ভঙ্গের দহনে হতাশায় দিন কাটছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ তো দুরের কথা  দেশ থেকে নতুন শিক্ষার্থীরা  আসা ক্যাম্পাসে পা রাখতেও পারছেনা। অনেকে অনলাইন ক্লাসও চালিয়ে যেতে পারছেন না। তবে গুনতে হচ্ছে টিউশন ফির কয়েক লক্ষ টাকা।

যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ থেকে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪৫ জন বিদেশী শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে এসেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫ জন শিক্ষার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের। ২০২০ সালের জন্য ‘টিয়ার ফোর স্টুডেন্ট’ ভিসায় কিছু পরিবর্তন করার পরে ব্রিটেনে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি করোনার সময়কালে, বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছেন।

ব্রিটিশ আইন অনুসারে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কলেজ পর্যায়ে সপ্তাহে দশ ঘন্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাত্র ২০ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দেশের লক্ষ লক্ষ ব্রিটিশ নাগরিক চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। মোট বেকারের সংখ্যা ১৫ লক্ষেরও বেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে। দেশটি ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হারে পৌঁছেছে। অর্থনীতির সমস্ত সূচকও হ্রাস পাচ্ছে।

শেখ সামাদ নামে এক শিক্ষার্থী  বলেন যে ব্রিটেনে চাকরীর জন্য আবেদনের জন্য তার একটি জাতীয় বীমা নম্বর (এনআই) প্রয়োজন। তিনি তিন মাস আগে এনআইয়ের জন্য আবেদন করেন তবে তা এখনও পাননি। আমাদের স্বপ্ন লন্ডনের সঙ্গে বাস্তবের  ফারাক আকাশ পাতাল।

ইউকে-বাংলা প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম বলেন যে আমরাও এক দশক আগে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে এসেছি। তখন একজন শিক্ষার্থী একটি রেস্তোঁরায় খাবারের জন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। এখন রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে করোনায়। কাজের জন্য এই দেশে যারা স্থায়ী হয়েছে তারা কাঁদছে। দক্ষ না হওয়া, সদ্য আগত শিক্ষার্থীরা সেখানে আরও সমস্যায় পড়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার তরুণ সাংবাদিক মেহেদী হাসান মারুফ বলেছেন, “আমি ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে চলে এসেছি। প্রথমে যে সমস্যার মুখোমুখি হ’ল ভাষা সমস্যা। আইইএলটিএসে আমার স্পিকিংয়ের ভাল স্কোর থাকলেও সেগুলি বুঝতে আমার এখনও সমস্যা হয়। দ্বিতীয়ত, এই মুহুর্তে কাজ সন্ধান করা প্রায় সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

শফিক চৌধুরী কয়েক বছর আগে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে আসেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেন যে বাংলাদেশ, মধ্য প্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার মতো কয়েকটি দেশ বাদে সরাসরি জীবিকার পক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ট্রলারে সমুদ্র পার হওয়ার চেয়ে শিক্ষার্থী ভিসায় লন্ডনে আসা বেশি নিরাপদ বলে মনে করে। আগে লোকেরা ব্রিটেন থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সীমান্ত পার করতে পারত, এখানেও কাজ-কর্ম ছিল।

মন্তব্য করুন