স্কুল-কলেজে সেই চিরচেনা পরিবেশ
দুই বছর পর মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে পুরোদমে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে। মহামারীর কারণে স্কুল-কলেজে পাঠদান সীমিত ছিল। মঙ্গলবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক হয়ে গেছে। একই সময়ে, প্রাক-প্রাথমিক শিশুরা মহামারীর প্রভাবে ৭২৬ দিন বন্ধ থাকার পর ক্লাসরুমে ফিরে এসেছে। এদিন এসব শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসও ছিল দেখার মতো। অভিভাবকরাও স্বস্তিতে। দেখা গেছে সেই চিরচেনা পরিবেশ।
দেশের স্কুল-কলেজে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দে মেতে ওঠেন। রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ঢেউ। প্রতিটি স্কুল-কলেজের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। এতে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষকে।
মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুলের গেটের সামনে চলে আসেন অনেকে। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কুশল বিনিময় করেন। বিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রেখে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, অনেক দিন পর আবারও সব শ্রেণির বন্ধুদের একসঙ্গে পেলাম। খুব ভালো লাগছে। করোনার কারণে আমরা এতদিন একসাথে ক্লাসে আসতে পারিনি। এখন থেকে পারবো খেলতে পারব. একসাথে স্কুলে আসতে পারব।
দীর্ঘদিন পর প্রাক-প্রাথমিক স্তরের (প্লে, নার্সারি ও কেজি) শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসায় খুশি শিক্ষকরাও। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, শিশুরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা তাদের চকলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানালাম। তারাও আমাদের পেয়ে খুশি, গৃহবন্দী থেকে মুক্ত হতে পেরে। এখন প্রতিদিন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসায় ক্যাম্পাস আবার আগের চেহারায় ফিরে আসবে। প্রতিদিন ক্লাস হবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। সাধারণ অভিভাবকরা মনে করেন, মহামারীর সময়ের শিক্ষার ঘাটতি এখন কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারে।
এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ২ মার্চ থেকে প্রতিদিন ক্লাস শুরু হয়। তবে, মাধ্যমিকে ক্লাস সীমিত ছিল; গতকালও তারা পুরোদমে ক্লাস কার্যক্রমে ফিরেছে।
এ পর্যন্ত এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন চারটি বিষয়ে এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। আর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে দুই দিন তিনটি বিষয়ে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একদিন তিনটি বিষয়ে ক্লাস হতো।
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া জানান, গতকাল তার স্কুলের প্রতিটি ক্লাস হয়। মহামারীর আগের মতোই ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাচ্চারাও খুব উৎসাহী। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা।
মগবাজারের ইম্পাহানি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকা বেগম বলেন, “স্কুলটি আগের গৌরব ফিরে পেয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে এটা আমার জন্য আনন্দের। ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুকালাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, আজ বিদ্যালয়টি আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। প্রভাতি বিদ্যানিকেতনের একজন সিনিয়র শিক্ষক পুলিং মালাকার বলেন, “আজ আমার মনে হচ্ছে আমি দুই বছর আগে ফিরে গেলাম।”
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শাহমিকা শাহরিন অনামিকা-এর মা রোকেয়া সুলতানা জানান, তার মেয়ে অনলাইন ক্লাসে তেমন মনোযোগ দেয় না। যেহেতু ক্লাসটি একটি পূর্ণাঙ্গ শারীরিক রুটিনের সাথে শুরু হয়, তিনি আশাবাদী যে ছাত্ররা তার মেয়ের মতো তাদের মনোযোগ হারিয়েছে, তারা তাদের পড়াশোনায় ফিরে আসবে।