সোদিফেরত নারীরা আর্তনাদ।দালালের খপ্পরে পড়ে সব হারাইছি, এখন কি খাবো?
চলতি বছরের জানুয়ারিতে (২০২২) দালালের মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে সৌদি আরবে যাই। খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে বিপদে পড়ি। মালিক খাবার দেয় না। মারধর করে ৩ দিন বাথরুমে আটকে রাখে। একদিন সুযোগ মতো পালিয়ে গেলাম। আমি রাস্তায় বেরিয়ে কোন কুলকিনারা দেখতে পেলাম না। তারপর এক বাঙালির সঙ্গে দেখা হল। ওই বাঙালি আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একটি গাড়িও দূতাবাসে যেতে সাহায্য করে। ১৫ দিন দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে ছিলাম। কিন্তু বাড়ি ফেরার বিমান ভাড়া নেই। পরে বাংলাদেশ থেকে ২২ হাজার টাকা পাঠালে দেশে ফিরে আসি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সৌদি ফেরত শ্রমিক বেবি আক্তার। তিনি বলেন, “দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম। তিন মাস পর ফিরে এসেছি। এখন কী করবেন? পোলাপাইনারকে কীভাবে খাওয়াবেন, বড় করবেন?’
মঙ্গলবার সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ (সিডব্লিউসিএস) এবং ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটির সহযোগিতায় আয়োজিত ‘নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিডব্লিউসিএসের কোষাধ্যক্ষ নুসরাত সুলতানা।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিএমপিডির কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদে নারী অভিবাসন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। ডেমো অফিসকে জবাবদিহিমূলক ও নারীবান্ধব পরিবেশ করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে, সরকার নতুন নীতিগত উদ্যোগ নিচ্ছে, যেমন পুনর্মিলন নীতি। সেবা দ্বারে ধাপে প্রচার করা উচিত।
ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মহুয়া লিয়াহ ফোলিয়া বলেন, “মিডিয়ার বেশিরভাগ খবরই নেতিবাচক। আমি কম ইতিবাচক খবর দেখি। অভিবাসী নারীদের তাদের শব্দ চয়নে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে তারা অসম্মান ও আঘাত না অনুভব করে। তিনি একটি শব্দ ভান্ডার তৈরিরও পরামর্শ দেন।
সিডব্লিউসিএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ইসরাত শামীম বলেন, “স্থানীয় সরকারের অভিবাসন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানা উচিত। অভিবাসী নারীদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে হবে। দেশের বাইরে যাওয়ার আগে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কীভাবে তাদের কাছে পাঠাতে হয় তা শেখানো উচিত। মোবাইল ফোনে ছবি তুলে আত্মীয়-স্বজন, কীভাবে বাঁচাবেন সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে অভিবাসন খাতের পূর্ণাঙ্গ তথ্য তুলে ধরা জরুরি।
২০২১ থেকে এই বছরের জুন পর্যন্ত, মিডিয়া স্ক্যান বেশিরভাগ নেতিবাচক কেস নিয়ে এসেছে। যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের অধিকাংশ মামলার গল্প। কিন্তু তারা কীভাবে যাবেন, কোন সেবা কেন্দ্র থেকে কী ধরনের তথ্য পাবেন, তা গণমাধ্যমে কম প্রচারিত হয়। আমরা আশা করি অভিবাসন খাতের পূর্ণ কভারেজ মিডিয়া দেবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ১২ জন সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ৬৫ জন নারী। ২২ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে, একজন বাংলাদেশী নারী কর্মী তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। চার দিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় তাকে বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করে ২৬ অক্টোবর তাকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরবে তেরো ও চৌদ্দ বছর বয়সী দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে, ১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী তিন মেয়ে এবং দুই শিশু বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় কারাগার থেকে দেশে ফিরে আসে। তাদের পাচার করা হয়েছিল।