• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই

    সাংবাদিক, কলাম লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। মঙ্গলবার বিকেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।

    মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও মৃত্যু রচনা ও সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় এই বিশিষ্ট ব্যক্তি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

    স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফয়সাল হক জানান, সৈয়দ আবুল মকসুদকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টা ৯ মিনিটে তাকে নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর বয়স ছিল ৭৫ বছর।

    সৈয়দ মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর বাবা গতকাল বিকেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    গান্ধীবাদের জীবন দর্শনে বিশ্বাসী সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, গণফোরামের সভাপতি মো: কামাল হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একিউএম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি এ. কে. আজাদ, সেক্রেটারি জেনারেল রঞ্জন কর্মকার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং বিভিন্ন পেশাদার ও সামাজিক সংস্থার নেতারা। জনস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি মো: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ন্যাপ সভাপতি আমিনা আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সহ আরও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।

    সৈয়দ মকসুদ জন্মগ্রহণ করেন ২৩ অক্টোবর, ১৯৪৬ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের ইলাচিপুর গ্রামে। তিনি ১৯৬৪ সালে ১৮ বছর বয়সে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেছিলেন পত্রিকায় ‘নবজুগ’ পত্রিকায় যোগ দিয়ে। লেখার পাশাপাশি তিনি সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ২০১৩ সালে তিনি একা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এই আন্দোলনের পরে, বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করা হয়।

    তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রক্ষার আন্দোলনেও তিনি জড়িত ছিলেন। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতেন। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাকের আগ্রাসনের প্রতিবাদ করার জন্য তিনি একটি বিরামহীন সাদা পোশাক পরেন। তার পর থেকে তিনি আমৃত্যু এই পোশাকটিই পরেছেন।

    সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ যোগ দেন। ২০০৮ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তারপরে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। তাঁর অনেক নিবন্ধ একই সাথে প্রকাশিত হয়েছে। আবুল মকসুদ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বোস এবং সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর জীবন ও রচনা অধ্যয়ন করেছেন। সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

    গবেষক-প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদের উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন, কার্যক্রম, রাজনীতি ও দর্শন’, ‘ভাসানী গল্প’, ‘সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য’, ‘ওয়ালিউল্লাহ ইন মেমোরি’, ‘কাগরি সম্মেলন ‘ইত্যাদি

    মন্তব্য করুন