• বাংলা
  • English
  • বিনোদন

    সে সময় পুরো ডিমটাও ভাগ্য জুটত না

    সোহেল রানা ‘৭১ এর রণাঙ্গনের একজন সশস্ত্র যোদ্ধা। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের নির্মাতাও। তাঁর অভিনীত ও প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাগুলির মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনি সশস্ত্র যোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। তার মন্তব্য শুনুন

    ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক ঘটনা আমার কাছে এখনও স্পষ্ট আমি শুধু এক দিনের ঘটনা নিয়েই কথা বলছি। সারা রাত হাঁটার পর আমি খুব ক্লান্ত হয়ে কেরানীগঞ্জের আটি বাজারে গেলাম। তখন প্রচন্ড ক্ষুধা। আমার বন্ধু মোস্তফা মহসিন মন্টু বল্ল, দেখ কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আমরা চাদরে জড়িয়ে বাইরে বের হতাম। কারণ চাদরের পিছনে স্টেনগান ছিল। আমরা খাবারের সন্ধানে হাঁটছিলাম। আমি একটি বাড়ির সামনের দিকে গিয়ে দেখলাম চারপাশে কয়েকটি মুরগি ছোটাছুটি করছে।। দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়িতে অনেক মুরগি রয়েছে। হতে পারে ডিমও পাওয়া যাবে। আমরা যদি আমাদের পয়সা দিয়ে ডিম ক্রয় করি তবে আমরা সেগুলি খেতে সক্ষম হব। বাড়িতে প্রবেশ করে এক বৃদ্ধ মহিলার সাথে দেখা হল।

    আমি তাকে বললাম, ‘মা, আপনি আমাদের কিছু ডিম বিক্রি করবেন?’ বললেন, ‘বাবা, ডিম নেই।’ কথা শুনে তিনি মন খারাপ হয়ে গেলেন। তখন আমি খারাপ মেজাজে চলে গেলাম। দশ বা কুড়ি ধাপ হাঁটার পরে আমি আবার ফিরে তাকালাম। একজনকে দেখলাম একজন মহিলার কাছ থেকে দুটি ডিম নিয়েছে। আমি দেখে খুব রেগে গেলাম। আমি চাদরটি সরিয়ে বন্দুকটি দেখালাম। আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সে আমাকে ডিম দেয় না কেন? মহিলাটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘ডিম কোথায়?’ আমি বললাম, ‘আপনি লোকটিকে ডিম দিয়েছেন, তখন মহিলাটি বললেন,‘ এটি ডিম নয়। আমি তাকে বিদায় জানালাম। ‘তারা আঞ্চলিক ভাষায় ডিমগুলিকে’ বাদা ‘বলত। বোঝা গেল, ডিম নামক জিনিসটি মহিলা চিনতে পারেনি। পরে সেই মহিলা আমাদের ত্রিশটি ডিম দিয়েছিলেন। কোনও দাম নেন নি। আমরা ডিম রান্না করেছি। একটি ডিমও আমাদের অংশে পড়েনি। আমি অর্ধেক খেয়েছি।

    মন্তব্য করুন