সুশৃঙ্খল স্বাধীনতা সকলের অধিকার নিশ্চিত করে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
সুশৃঙ্খল স্বাধীনতাই সকলের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো স্বাধীনতাই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম দায়িত্বের সঙ্গে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমি মিলনায়তনে ‘সুশাসনে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সদস্যদের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই কর্মশালায় ৯২ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম ও প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হবে। আজকের কর্মশালার মাধ্যমে এটা আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
কর্মশালার প্রথম পর্বে ছিল বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা। তথ্য অধিকার আইন প্রসঙ্গে প্রধান তথ্য কমিশনার ও সাবেক তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ বলেন, জনগণের কাছে প্রয়োগের জন্য সরকারের হাজার হাজার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের উপর জনগণের দ্বারা প্রয়োগ করা হয় একমাত্র তথ্য অধিকার আইন। এই আইনের মাধ্যমে জনগণ সরকারকে দায়বদ্ধ করে।
মর্তুজা আহমদ আরও বলেন, গণমাধ্যম ঐতিহাসিকভাবে সুশাসনের জন্য কাজ করছে। তথ্য এখন শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। তথ্যের ইতিহাস যেমন পুরনো, তেমনি বঞ্চনার ইতিহাসও পুরনো। এই আইনের উদ্দেশ্য শুধু তথ্য চাওয়াই নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য প্রকাশে স্বতঃপ্রণোদিত করাও। এখন সরকারি ওয়েবসাইটে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। অনেক সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে জানেন না। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, সব আইনেরই কিছু দুর্বলতা থাকে, তথ্য অধিকার আইনও থাকে। আমরা সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম ‘রুলস অব বিজনেস’-এর বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হল যে কোন বিষয়ের কাজকর্ম মানুষ বুঝতে পারে। মানুষ যা করে তার পরিণতি বুঝতে পারে। তদনুসারে, সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান, আইন ও প্রবিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান এবং লক্ষাধিক মানুষ এই সংগঠন পরিচালনার জন্য কাজ করে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে তা মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে। আর মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কে কোন কাজ করবে তা নির্ধারিত হয় ‘রুলস অব বিজনেস’-এর মাধ্যমে। এটি সংবিধান থেকে উদ্ভূত একটি নীতি, যা প্রায় আইনের মর্যাদার সমান।
এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম।
কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে ছিল প্যানেল আলোচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, নানা কারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতায় মেধা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেকোনো বিষয়ে সমালোচনা করতে পারেন। তবে তা হতে হবে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে।
দক্ষ সম্পাদনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্পাদনা সাংবাদিকতার প্রাণ।
একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, মিডিয়া একটি ছুরির মতো, এটি অস্ত্রোপচারেও ব্যবহার করা যায়, খুনেও ব্যবহার করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছাড়া বাংলাদেশে আর কিছুই টিকবে না। আদর্শের এই ভিত্তি সঠিক হলে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মমিনুর রশিদ আমিন। বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিএসআরএফ সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তপন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ও ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি মাসুদুল হক।