• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

     সুরক্ষার কথা শুদু মুখেই দিন দিন কমছে কৃষি জমি

    মংলা বন্দর সচল রাখতে পশুর নদী খনন করা হচ্ছে। মংলার চিলা এলাকায় ৭০০ একর জমিতে খনন করে বালু ফেলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর এই তিন ফসলি জমিতে চাষাবাদ শিকেয় উঠে। পশুর নদী খননের অবশিষ্ট বালুও খুলনার দাকোপের বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলি জমিতে ফেলা হচ্ছে। তবে কৃষকদের প্রতিরোধের মুখে বর্তমানে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

    ইট তৈরিতে ফসলি জমি লুটপাটের প্রতিবাদ করেছেন খোদ কৃষিমন্ত্রী। আবদুর রাজ্জাকের নিজ জেলা টাঙ্গাইলের ক্ষুব্ধ কৃষকরা চলতি বছরের শুরুতে মন্ত্রীকে চিঠি দেন। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইটভাটা মালিকদের হামলা থেকে এলাকার ফসলি জমি নিরাপদ নয়।

    এভাবে কখনো সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নের ক্ষোভ, কখনো ব্যক্তি পর্যায়ের আগ্রাসনে কৃষিজমি পড়ছে।

    ইটভাটার জন্য জমি দখল, সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, শিল্পায়ন, আবাসন প্রকল্প, নগরায়ন, বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদির কারণে সারা দেশে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো আছেই।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। নষ্ট জমির একটি বড় অংশে চাষ ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। এছাড়া শস্য বিন্যাস, পরিকল্পনা অর্থাৎ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষই কৃষি উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

    চাষের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠান : কৃষি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহারের বিরুদ্ধে বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার। চাষযোগ্য পতিত জমি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা আবাদি অনাবাদি জমি উদ্ধারে তদন্ত শুরু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং রেলপথমন্ত্রী কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক।

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল মিল এবং রেলওয়ে বিভাগে অধিক চাষযোগ্য পতিত জমির তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তবে রেলওয়ের মালিকানাধীন ৮৫০ হেক্টর জমি ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কত চাষযোগ্য জমি রয়েছে তা তারা জানেন না। জমির পরিমাণ বের করতে মাঠে কাজ চলছে।

    তবে কৃষিমন্ত্রীর চিঠির পর গত নভেম্বরে বৈঠক করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে পতিত জমির পরিমাণ জানতে তথ্য হালনাগাদ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

    এ বিষয়ে কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন বলে জানান তারা। এমনকি মন্ত্রণালয়ের দখলে থাকা এক ইঞ্চি পতিত জমিও চাষের বাইরে থাকবে না।

    এ বিষয়ে পতিত জমি চাষাবাদে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের কঠোরভাবে মনিটরিং করতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

    হাউজিং কোম্পানির আগ্রাসন : ঢাকা শহরের আশপাশে হাউজিং কোম্পানির অগণিত সাইনবোর্ড দেখা যায়। প্রতিটি কোম্পানি শত শত একর আবাদি জমি কিনেছে। তারা সেসব জমি ভরাট করে বেশি দামে বিক্রি করবে। এর আগে শত শত একর ফসলি জমি কিনে আবাসন তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা।

    ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২২০ হেক্টর আবাদি জমি অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, শিল্প, রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আবাদি জমি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.২০ শতাংশে নামবে।

    অনাবাদি জমি: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট জমির পরিমাণ ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার একর। এর মধ্যে ২ কোটি ৮১ হাজার একর জমিতে আবাদ হয়। এ ছাড়া প্রায় ৬ লাখ ৭১ হাজার একর জমি চাষযোগ্য হলেও চাষের আওতায় আসেনি। আবাদি জমির অপচয়ের দিক থেকে শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে বান্দরবানে ১ লাখ ৬ হাজার একর, সুনামগঞ্জে ৯ লাখ ২৬ হাজার, ফরিদপুরে ৪৩ হাজার, সিলেটে ৩৯ হাজার, নেত্রকোনায় ৩২ হাজার, মৌলভীবাজারে ৩১ হাজার, মৌলভীবাজারে ২৯ হাজার। চট্টগ্রামে ২৩ হাজার, টাঙ্গাইলে ২১ হাজার, হবিগঞ্জে ২১ হাজার ও কিশোরগঞ্জে ২১ হাজার একর জমি রয়েছে।

    মন্তব্য করুন