জাতীয়

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি।স্বজনদের দু’চোখ খুঁজছে প্রিয়মুখ

শাহজাহান তার স্ত্রী রেশমির কথা রাখেননি। শিগগিরই ফিরবেন বলে বাড়ি ফেরেননি। শনিবার রাত ৯টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর ট্রাক চালক শাহজাহানের ফোন বেজে ওঠে। বললেন, ‘আমার কাজ প্রায় শেষ, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব, বাজার সদাই কিছু লাগবে?’ হয়তো শাহজাহান বাজার করার সুযোগও পাননি। তার আগেই ডিপোতে আগুন, ভয়াবহ বিস্ফোরণ। রাত শেষে, সকালে, বিকেলে শাহজাহান আর বাসায় ফেরেননি। স্বামীর মুখ খুঁজছে রেশমির দুই চোখ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে।

রেশমি বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পরই ডিপোতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শাহজাহানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফোন বন্ধ পেয়ে রেশমি তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। তার একটি সন্তানের বয়স ২ বছর এবং অন্যটির বয়স ৫ বছর।

রোববার সকাল থেকেই নিখোঁজের স্বজনরা চমেক হাসপাতালে ভিড় করছেন; সন্তান খুঁজছে বাবাকে, বাবা খুঁজছে সন্তানকে, স্ত্রী খুঁজছে স্বামীকে। চিকিৎসক-নার্সদের চোখের কোণ স্বজনদের কান্নায় ভিজে গেছে। জরুরী বিভাগের গেটে অ্যাম্বুলেন্স এলে স্বজনরা দৌড়ে  যায়। আহত বা নিহত ব্যক্তি তাদের আত্মীয় কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তারা। কেউ এসেছে প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে, কেউ মোবাইলে তোলা ভালো সময়ের ছবি।

চমেকের বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকে কলেজ ছাত্রী। কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে আমার বড় ভাই শাহজাহান মালামাল নিয়ে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে গিয়েছিলেন। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পারিনি। ভাইয়ের ডিপোতে ট্রাক আছে, কিন্তু ভাই নেই। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তাও জানি না। এ সময় তার বাবাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে, থাকে চট্টগ্রাম শহরের মনসুরাবাদে।

ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে নগরীর নিমতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন কাভার্ড ভ্যান চালক মো. সুমন। শনিবার রাতে মালামাল বিএম কন্টেইনার ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিস্তেমফরানের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম নগরীর কলসিদিঘী পাড় এলাকার মো. ফারুক বিএম ডিপোতে ট্রাকে মালামাল লোড-আনলোড করতেন। তার মেয়ে ফাতেমাও জানান, বিস্ফোরণের পর তিনি নিখোঁজ । গার্মেন্টস কর্মী ফাতেমা বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর রাতেই ডিপোতে ছুটে যাই। আমি সেখানে অনেক খুঁজেছি। সকাল থেকে হাসপাতালে না পেয়ে বসে আছি। আমি আমার বাবাকে ফিরে পাব কিনা তাও জানি না। ‘

রোগী আসে আর রোগী যায়। ভাইকে কোথাও দেখিনি। ‘সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরার বাসিন্দা বলেন, ‘ভাইয়ের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তিন শিশুই নাবালক। ভাইকে না পেলে সব শেষ হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন