• বাংলা
  • English
  • বিজ্ঞান ও প্রজক্তি

    সিকৃবির সাফল্য।অভয়াশ্রমে সুরক্ষিত দেশীয় মাছ

    দেশের বিভিন্ন হাওর ও বাওড় থেকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশীয় মাছের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। হাওরে ঘেরা সিলেট অঞ্চলও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে মাছের অভয়ারণ্য, প্রজনন ও রোমিং অঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে প্রজনন মৌসুমে নিখরচায় মাছ ধরার ফলে অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। তবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) দেশীয় মাছের বিপন্ন প্রজাতির মাছ উত্পাদন, সংরক্ষণ ও প্রসারণ, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা এবং জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। ২০১৮ সাল থেকে সিকৃবি সিলেটের রাতারগুল জলাভূমি বন এবং গুরকাচি নদীতে মাছ সংরক্ষণে সফল হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মাছের অভয়ারণ্য স্থাপন করে জেলেরা জড়িত থাকার কারণে এই সাফল্য এসেছে। তারা বলেছে যে মাছের দেশীয় প্রজাতির সুরক্ষাই নয়, টেকসই আয়ের পথও মাছের সাথে জড়িতদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে দেখানো হচ্ছে। মাছের আয় থেকে শুরু করে সেলাই মেশিন, ছাগল ও ভেড়া এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ইতিমধ্যে জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ রক্ষায় মৎস্য অনুষদ, সিকৃবি অনুষদের জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি শুরু হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের আওতাধীন এনটিপিফেজ -২ প্রকল্পের অর্থায়নে সিকৃবি প্রশাসন, বন বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ এই প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। প্রকল্পটির নেতৃত্বে আছেন মৎস্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এসএইচইউ) সমাজকর্মের অধ্যাপক ড. ফয়সাল আহমেদ। তাদের তত্ত্বাবধানে, শাড়ি-গোয়াইননদী এবং সিলেটের সংলগ্ন হাওর ও বিলে দেশীয় মাছের প্রজননের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণার অংশ হিসাবে, রাতারগুল এবং গুরকাচি নদীর উপর প্রায় ৩ একর জমিতে অভয়ারণ্য স্থাপন করা হয়। গুরকাচি অভয়ারণ্যে ৫০ জন এবং রাতারগুলে ৩০ জন জেলেকে নিয়ে অভয়ারণ্য পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। অভয়ারণ্য তৈরির ফলস্বরূপ, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ যেমন চিতল, ঘোড়া, খড়ি, নানিদ ইত্যাদি এখন সেখানে পাওয়া যায়। প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছগুলি গৃহহীন হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, রাতারগুল জলাভূমি বন এবং গুরকাচি নদীর উপর একটি বিলের উপর অভয়ারণ্য স্থাপন করা হয়েছে। অভয়ারণ্যের পাশের জাল এবং বাঁশ দিয়ে তৈরি কলমে কুশিয়ারা সহ বিভিন্ন নদী থেকে ডিম বোঝা কাদা ও আলগা মাছ সংগ্রহের পরে প্রজনন করা হয়। ফলস্বরূপ, বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন জলাশয়ে এই মাছগুলির উত্পাদন বৃদ্ধি করা এবং বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এ ছাড়া জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্ষা মৌসুমে মাগুর, পাবদা, পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ খোলা পানিতে খাঁচায় চাষ করা হচ্ছে। এই খামারবিহীন মাছ বিক্রি করে লভ্যাংশ থেকে টেকসই আয়ের জন্য ইতোমধ্যে জেলেদের সেলাই মেশিন, ছাগল এবং ভেড়া এবং অন্যান্য আইটেম বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড বলেন যে প্রতি শুকনো মরসুমে খোলা জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মাছের অভয়ারণ্য দিন দিন কমছে। হাওর ও বিল সেচে নিখরচায় মাছ ধরার ফলে মালা সহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। কলমে এই দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুনরুত্পাদন করতে সক্ষম হয়। এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলি বর্ষাকালে খোলা জলে ছেড়ে দিয়ে সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে, অন্যান্য দেশীয় প্রজাতির মাছও বাড়ছে। প্রকল্পের আওতায় মৎস্য চাষের সাথে জড়িত রাতারগুলের আরব আলী ও গুরুকচি কারাগারের অর্চনা দাস বলেন, অভয়ারণ্যটি নির্মাণের কারণে এখন আগের চেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যায়।

    মন্তব্য করুন