• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সারা বছর ব্যবসায়ীদের মুনাফা, এখন দেশের স্বার্থ দেখতে হবে!

    দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের গুদাম থেকে বাজার পর্যন্ত তদারকি (সাপ্লাই চেইন) করতে বলা হয়েছে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন এসব পণ্য বাজার থেকে মজুদ করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। টিসিবির পণ্য সঠিক মূল্যে নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা নিশ্চিত করা।

    মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত পণ্যের মূল্য বাস্তবায়নের বিষয়ে বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নির্দেশনার পর বাজারে পণ্যের দাম কমার কোনো প্রভাব নেই। এ জন্য সারাদেশে বাজার নজরদারির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

    তিনি বলেন, এই নজরদারি ব্যবস্থাপনায় কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। এসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রধান তিনটি উৎস থেকে কৃষিপণ্যের বাজার মনিটরিং করবেন। বিশেষ করে আলু ফ্রিজার এবং পেঁয়াজের বড় বাজারে।

    গতকাল বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

    এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    বৈঠক শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নে গুদাম ও বাজার মনিটরিং জোরদার করতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিসিদের মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি ঝুপড়ি তদারকি করতে বলা হয়েছে। যেখানে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে সেখানে অভিযান চালানো হবে।

    তিনি বলেন, বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

    মনিটরিং বাড়ানো হলে ছয়টি পণ্যের দাম আরও কমবে। সরকারের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে সারাদেশের ডিসিদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন বাণিজ্য সচিব।

    গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে। এছাড়া আগে থেকেই চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী ডিম প্রতি কেজি ১২ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। এছাড়া খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, খোলা তেল ১৪৯ টাকা এবং পাম তেল ১২৪ টাকায় লিটারে বিক্রি হচ্ছে।

    এই পাঁচটি পণ্যের নির্ধারিত দাম উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দু-একদিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে। তবে বাগেরহাট ও দিনাজপুর জেলার ডিসি গতকাল বলেন, গত সোমবার তারা এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। আর গতকাল এক ভার্চুয়াল বৈঠকে কিছু নির্দেশনা দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আজ বুধবার তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে বৈঠক করবেন।

    রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, গুদাম থেকে পণ্য সংগ্রহের সময় রশিদ নিতে হবে। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুদামের দর অনুযায়ী বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করবেন। কোনো সুবিধাভোগী মাঝখানে সুবিধা নিতে চাইলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কেউ যাতে মালামাল মজুত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। টিসিবির পণ্য সরবরাহও মনিটরিং করা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিভাগ একযোগে কাজ করছে। বাজারে যখন সংকট দেখা দেয় তখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের ব্যাপারে মাঠ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

    পেঁয়াজের দাম নির্ধারণে জটিলতা

    সরকার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করেছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে পাইকারি বাজার থেকে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন।

    বৈঠকে রংপুর বিভাগের দুই ডিসি বলেন, মাঠ পর্যায়ে বাজার মনিটরিংয়ে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে পাইকারি বাজার থেকে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। তাই তারা সরকার নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে চায় না। বৈঠকে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা সারা বছরই মুনাফা করেন। এখন দেশের স্বার্থে সরকার নির্ধারিত মূল্য মেনে নিতে হবে।