সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ গ্রেফতার আরও তিন শতাধিক
সারাদেশে পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে বিএনপি নেতাসহ তিন শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ৫০টি থানায় ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে রাষ্ট্রীয় নানা কর্মসূচি রয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার স্বার্থে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীকে গ্রেফতারে ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর বিশেষ অভিযান চলছে। অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন মামলার অনেক আসামি পলাতক রয়েছে। অনেকের নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জনসমাগম ঠেকাতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি বিএনপির। অভিযানের ভয়ে থাকা নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, চলমান অভিযান কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়। এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীতে বিভিন্ন মামলায় ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ওই রাতেই পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা সারাদেশে মোট কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে সে বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বিএনপির ১৬৪ সদস্যের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসআই আব্দুল কাদের ভূঁইয়া ও মেঘনা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা করেন।
এদিকে গত এক সপ্তাহে উপজেলা বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফলে বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঘরেই থাকছেন না। আসামিদের খুঁজে না পেয়ে স্বজনদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতা সুরুজ মিয়া অভিযোগ করেন, তাকে না পেয়ে বাড়ি থেকে তার ছেলেকে নিয়ে যায়। রহমতুল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ।
সোনারগাঁ থানা জাসাসের সভাপতি আমির হোসেন জানান, তার রাজনীতির কারণে কোনো মামলা না হলেও বড় ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। শুধু মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর পাঞ্চায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খানসহ ১৩ জনের নাম ও অজ্ঞাত ২০ জনের বিরুদ্ধে হাবাসপুর ইউনিয়নের চরঝিকরি গ্রামের যুবলীগ কর্মী আকমল হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন। এরপর থেকে পুলিশ বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খান বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কুষ্টিয়ায় মহাসড়কে ভাঙচুর ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে মডেল থানার এসআই মোহন সাহা বাদী হয়ে ১৮ বিএনপি নেতা ও অজ্ঞাতপরিচয় ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
খুলনার রূপসা উপজেলায় ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে রূপসা থানার এসআই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় রূপসা উপজেলা থেকে বিএনপির ৭ সদস্য এবং অন্যান্য মামলায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রূপসা থানার ওসি সরদার মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানান।
যশোরের মণিরামপুরে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি, নাশকতার পুরনো মামলায় আসামি তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মণিরামপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ ইকবাল হোসেন বলেন, ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও ডোর টু ডোর তল্লাশি চালাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিযান চালিয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি দেলুয়ার হোসেন সুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কামালপুরের নিজ বাড়ি থেকে পুরনো একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।