সারাদেশে নানা আয়োজন।বিজয়ের দিনে উৎসবে রঙিন
‘ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত/ আমরা আনিব রাঙা প্রভাত/ আমড়া টুটাব তিমির রাত/ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই লাইনগুলো লিখেছেন যেন এদেশের সম্ভ্রান্ত ছেলেদের জন্য। লাইনে বর্ণিত প্রতিটি শব্দের মতোই মাতৃভূমির টানে বাঙালি মায়ের দামাল ছেলেরা ভোরের দুয়ারে ধাক্কা দেয়, আর রাঙা প্রভাত নিয়ে আসে অন্ধকার রাত। এই রাঙা প্রভাত বা স্বাধীনতা এখনো আসেনি। ৩০ লাখ শহীদ আর ২০ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ২৩ বছরের গোলামী, বহুদিনের কাঙ্খিত স্বাধীনতা, সেই বিজয়। বাঙালি জাতির বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে শুক্রবার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ করেছে দেশবাসী। তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাতে আগত সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নেন।
সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন। সকলের হাতে ছিল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিবেদন, মুখে ছিল বিজয়ের হাসি, আর চোখে ছিল নতুন ভবিষ্যতের আশা। একনাগাড়ে তারা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে থাকে।
সাভার থেকে আসা পক্ষাঘাতগ্রস্ত মো. তছির উদ্দিন জানান, তিনি সুস্থ থাকতে এলাকায় ইমামতি করতেন। তিনি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাইতেন এবং স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। বছর দুয়েক আগে তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে আর কাজ করতে পারেন না। তবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর স্মৃতিসৌধে আসতে ভুল করেন না তিনি।
৬০ ফুট জাতীয় পতাকা নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার তিন্নি বলেন, এই বিজয় দিবসে আমি একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। যার ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তারা স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল জাতীয় সালাম প্রদান করে। বিউগল একটি শোক নোট ধ্বনি।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা, সরকারের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে সকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেন এবং প্রত্যক্ষ করেন।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিজয়ের ৫১তম বছরে জঙ্গিবাদ বিএনপির বিজয় বিনষ্ট করতে তৎপর রয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের শক্তি জোগাড় করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ পুরোপুরি ভুলে গেছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, আছে অর্থনৈতিক লুটপাট, চাঁদাবাজি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আর কোনো আপস নেই। যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যারা দেশবিরোধী তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধকে ধারণ করেছিলেন, তাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ও অনুপ্রাণিত।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৫০ বছরেও স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের মানুষ শোষণ, বঞ্চনা, দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পায়নি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে দেশের মানুষের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি: আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাসদ, বাসদ, জাসদ, বিকল্পধারা, তরিকত ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী কর্মীরা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।