জাতীয়

সারাদেশে ডেঙ্গু।ডেঙ্গু মোকাবিলার আয়োজন  কেবল শহরে, গ্রামে নয়

সবুজ-শ্যামল সিলেটের জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়ন। এমনকি এই প্রত্যন্ত শহরে এখন দিন নেই, রাতে মশা নেই। ডেঙ্গুর ভয়ে মন ভরে গেলেও গ্রামের মানুষের কিছু করার নেই। কারণ, ওই ইউনিয়ন পরিষদে নেই মশা নিধনের ওষুধ, নেই মশা নিধন কর্মী। হতাশ গ্রামবাসীরা যতটা সম্ভব মশার হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর উপায় খুঁজছে। পার্শ্ববর্তী দরবস্ত ইউনিয়নেরও প্রায় একই অবস্থা। ওই ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিধনের মেশিন থাকলেও তা চালানোর লোক নেই। কোনো সংস্থাই ওষুধ সরবরাহ করেনি।

শুধু জৈন্তাপুরের এ দুটি ইউনিয়ন নয়, সারাদেশে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়লেও তৃণমূল পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অবস্থা এমন। সরকারের তথ্যমতে, ৫৮টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরও ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া জেলা-উপজেলা শহর ও গ্রামে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালানো হলেও জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। তবে পৌর এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম, ওষুধ ও জনবলের অভাব রয়েছে।

জৈন্তাপুরের দরবস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার হতাশ কণ্ঠে বলেন, এলাকায় প্রচুর মশা আছে, কিন্তু মারার ওষুধ নেই। বারবার বলা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য। কিন্তু কবে শক্ত হবে বুঝতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, “ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিধনের সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে পৌরসভা মশা নিয়ন্ত্রণে ডিভাইস পাঠাতে পারে। প্রতিটি পৌরসভায় মশা নিধনকারী রয়েছে। আর ডেঙ্গু নিধনের ব্যবস্থা আছে।” গ্রামে যতটা দেখা যায় ঢাকায় ততটা দেখা যায় না।শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি কুমিল্লায় আছি। ডেঙ্গু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে ডেঙ্গু নেই।

আপনি একটি মহামারী বিস্তার বোঝাচ্ছেন হিসাবে এই ক্ষেত্রে নয়. এ অবস্থায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, গত শুক্রবার পর্যন্ত মাদারীপুরে ৯০ জন, ফরিদপুরে ৯৫ জন এবং মাগুরায় ২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় লোকবল, যন্ত্রপাতি ও ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। শহরে মশা আছে। দুই থেকে তিন মাস পর শ্রমিকদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়।

বরিশালের আগৈলঝাড়ার চেয়ারম্যান আবদুর রইস সেরনিয়াবাত বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব কোনো কার্যক্রম বা যন্ত্রপাতি নেই। অতীতে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের লোকজন এসে মশা নিরোধক ছিটিয়েছেন। এবার তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। কোন অফিস আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু ওই এলাকায় পর্যাপ্ত মশা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৬ জন হাসপাতালে ভর্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, ইউনিয়ন পর্যায়েও মশা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হতে হবে।

মাস্ক বিশেষজ্ঞ। মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় যানবাহন নেই। তাহলে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে কেমন হবে। পৌরসভার একটি বা দুটি ফগার মেশিন আছে। তাদের রুটিন কাজ করার লোক নেই। উপজেলা পর্যায়ে কিছুই নেই। তিনি বলেন, একসময় শুধু শহরেই এডিস মশার জন্ম হতো। ২০১৯ সালে, কুষ্টিয়ার ছাত্রপাড়া নামক একটি অজপাড়াগায়েও অনেক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। নারিকেলের মালা, পাতা এমনকি গাছের জমে থাকা পানিতেও এডিস মশা জন্মায় বলে তথ্য রয়েছে। তাই এডিস এখন আর শহুরে মশা নয়। মফস্বল পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই মশা বাড়ে এবং স্বাভাবিকভাবেই কমে।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর যে তালিকা তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে তাতে নানা ত্রুটি রয়েছে। ঢাকা শহরের তালিকায় থাকা রোগীদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় এসেছেন। রাজধানীর রোগীর তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় যেসব রোগী দেখছি, তাদের বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসছে। তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে আত্মীয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকার প্রত্যেক রোগীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।