‘সাদা সোনা’ যাবে সারা দেশে।খরচ কমবে এবং রপ্তানিতে নতুন বিনিয়োগ আসবে
খুলনার লোনা পানির সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত চিংড়ির চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। মোট চিংড়ি উৎপাদনের প্রায় ৬০% হয় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায়। বিদেশের রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর চিংড়ি শিল্পে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রপ্তানিকারকদের মতে, মংলা বন্দরে সংকট দেখা দিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চিংড়ি রপ্তানি ত্বরান্বিত করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে এক কনটেইনার চিংড়ি পরিবহনে খরচ পড়বে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া আমদানিকারকরা সহজেই খুলনায় যাতায়াত করতে পারেন। এর প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর খুলনায় ৭৫ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ি এবং ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন হয় ১ লাখ ৬ হাজার ৭২১ টন চিংড়ি। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ৬ হাজার ৭৫৮ টন চিংড়ি।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, গত অর্থবছরে ৩ হাজার ৬ কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। এ অঞ্চলের চিংড়ি সাধারণত মংলা বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। কিন্তু অনেক সময় মংলা বন্দরে কন্টেইনার জাহাজ পাওয়া যায় না। এরপর চিংড়ি রপ্তানি করতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। তিনি বলেন, একটি কন্টেইনার চিংড়ি রপ্তানি করতে তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ট্রাক লাগে। ফেরি টার্মিনালে অপেক্ষা করতে চাইলে গাড়িতে জেনারেটরে বিদ্যুৎ সংযোগ রাখতে হবে। দেখা যায়, খুলনা থেকে ফেরিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ভ্যানে করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেতুটি চালু হলে ঘাটে যেতে সময় লাগবে না। তাহলে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বন্দরে পণ্য পৌঁছানো যাবে। এক কন্টেইনার চিংড়ি রপ্তানি করলে অন্তত দেড় লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।
চিংড়ি রপ্তানিকারক মডার্ন সি ফুডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল হক বলেন, যাতায়াত সমস্যার কারণে বিদেশি ক্রেতারা খুলনায় আসতে চান না। তারা সকালে এসে বিকেলে কারখানায় ফিরতে চায়। এত দিনে সেটা সম্ভব হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হলে এ সমস্যা কমবে।
চিংড়ির চাহিদা বাড়তে থাকায় খুলনায় গড়ে উঠেছে আধা নিবিড় চিংড়ির খামার। দ্রুত বর্ধনশীল এই খামারটি বছরে দুবার চাষ করা যায়। উৎপাদন দ্বিগুণ হয়।
চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি তারিকুল্লাহ খান বলেন, বরফসহ ঢাকা-চট্টগ্রামে ট্রাক চিংড়ি নিতে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেতুটি চালু হলে এই খরচ কমবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে প্রতিদিন ১৪০ টন মাছ দেশে যায়। পরিবহন খরচ কমলে লাভ বাড়বে, এতে মাছ চাষিরা লাভবান হবেন।