জাতীয়

সাউন্ডপ্রুফ নির্যাতনের সেলে চিকিৎসা! এএসপি আনিসুল

মানসিকভাবে অসুস্থ ও মাদকসেবীদের ‘চিকিৎসা’ দেওয়ার নামে মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগীদের উপর অব্যক্ত নির্যাতন চালানো হয়। রাজধানীর আদাবর বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর রোডে দুটি সাউন্ডপ্রুফ গোপন নির্যাতন সেল স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম গত সোমবার নৃশংস নির্যাতনের ফলে মারা গেছেন। তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার তিনতলা আবাসিক ভবনে পুরো হাসপাতালটি দেখা গেছে। তবে হাসপাতালের কোনও বৈধতা নেই। অত্যাচারে একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় ১০ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করার পরে হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা পালিয়ে গেছেন। হাসপাতালে  ঢোকার পরে দেখা গেল, পরিষ্কারভাবে সাজানো কক্ষগুলির মধ্যে দুটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে। নিচতলার দুটি কক্ষ এবং দ্বিতীয় তলায় গোপন কক্ষ। দেয়ালের চারদিকে সিলিং পর্যন্ত ভারী ফোম আস্তরণ, মেঝেতে একই ব্যবস্থা। হাসপাতালের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানসিকভাবে অসুস্থরা ওই দুটি গোপন কক্ষে চিকিত্সার নামে নিয়মিত নির্যাতন করা হয়। ভর্তির পরে, রোগীদের ‘বশী’ করার জন্য একটি গোপন কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি তাদেরও সাউন্ডপ্রূফ নির্যাতন সেলে রাখা হয়েছিল।
হাসপাতালের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকেও সোমবার সকালে সেখানে মানসিক চিকিত্সার জন্য নিয়ে যাওয়ার পরে একটি দ্বিতল সাউন্ডপ্রুফ রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে হাসপাতালের কর্মীরা তাকে নির্যাতন করেন। ঘরের সিসিটিভি ফুটেজটি স্পষ্টতই নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে। আনিসুল করিমের মৃত্যুর পরে দেড় বছর ধরে বিনা অনুমতিতে হাসপাতালের চলাচল চলছিল। অবৈধ হাসপাতালটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল এবং কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি মেডিকেল সেন্টারের একাধিক চিকিৎসক দ্বারা কর্মরত ছিল। গতকাল হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তাদের ভিজিটিং কার্ডে থাকা সকলের মোবাইল ফোন নম্বর ব্লকড অবস্থায় পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটি পাঁচজনের মালিকানাধীন। তাদের মধ্যে ডঃ মোহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদের সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন। তবে এক সপ্তাহ ধরে তিনি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল বিকেলে তিনি তার মোবাইলে ফোন করলে ফাতেমা তুজ জোহরা নামের এক মহিলা নিজেকে আত্মীয় হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, “স্যার, আমি খুব অসুস্থ এবং আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারছি না।” তবে তারা পুলিশ কর্মকর্তার উপর নির্যাতনের ভিডিও দেখেছেন। তারা মনে করে যে এটি ঠিক নেই। সেখানে সাউন্ডপ্রুফ রুম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন যে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
হাসপাতালের কর্মচারী রুমা আক্তার জানান, দুর্ব্যবহার করা রোগীদের ওই দুটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। কেউ যদি সেখানে কান্নাকাটি করেও শব্দ বের হয় না। তবে বড় সার্জেন্টরা সিসিটিভি-র ঘরের ভিতরে দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করতেন।

মন্তব্য করুন