• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত অধিকার খর্ব হবে’

    জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যম সংবিধানেই স্বীকৃত। তবে এই বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পরিপক্ক হয়েছে। আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। তারা পরোয়ানাহীন গ্রেফতার ও তল্লাশির বিধান সংশোধনের দাবি জানান।

    আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিল পাসের প্রক্রিয়া নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিরোধী দলের এসব সমালোচনার জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করা নয়। আপনার স্বাধীনতা মানে আপনি যা চান তা বলা নয়।

    অন্যকে অসম্মান না করা। নারীদের সাথে কথা বলা অভদ্রতা নয়। এসব নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যরা আইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত।

    স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরাপদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কোনো বিকল্প নেই।

    এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। প্রস্তাবিত আইনে কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমিয়ে জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো হলেও অপরাধের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে জনগণকে হয়রানির সুযোগ থাকবে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের পর্যালোচনায় বলেছে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ (মিথ্যা বা আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ), ধারা ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ) এবং ধারা ৩১ (আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য শাস্তি) অক্ষত রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া। যেহেতু অনুচ্ছেদ ২৫-এ ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট করা’ সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা নেই, তাই এর অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।

    গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই আইনে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। পুরানো মদ নতুন বোতলে রাখার মতো। আইন নবায়ন হচ্ছে কিন্তু স্বস্তি ফিরছে না। এই আইনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই বাস্তবায়িত হচ্ছে।

    জাতিসংঘ, সম্পাদকমণ্ডলীসহ সাংবাদিকদের আপত্তি ও উদ্বেগ রয়ে গেছে। তিনি বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সম্পাদক পরিষদ ৯টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। এখন প্রস্তাবিত সাইবার আইনে শাস্তি ও জামিন সংক্রান্ত ৭টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। দুটি ধারায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দুটি ধারা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনটি বাতিল না করে শাস্তি ও জামিনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

    মোকাব্বির খান বলেন, এই আইন ভিন্নমত, সমালোচনা ও মুক্তচিন্তাকে দমনের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার। গত সাড়ে চার বছরে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা চাপা দিতেই এটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাংবাদিক সমাজ। এই আইনের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব করা হয়েছে। এই আইন পুলিশকে বাড়ি, অফিস এবং তল্লাশি সংস্থায় প্রবেশের ক্ষমতা দেয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভার সহ সবকিছু দখল করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য কোনো আইন পুলিশকে এত ক্ষমতা দেয়নি।

    এই আইনে কাউকে সহজেই হয়রানি করা যায় উল্লেখ করে মোকাব্বির খান বলেন, রাষ্ট্রের একজন শীর্ষ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী) যখন একটি জনপ্রিয় শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রকে বলতে পারেন- এটা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। অনাকাঙ্খিত ও অনিচ্ছাকৃত। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে পত্রিকার ঘোষণা বাতিল করা যেতে পারে। স্বাধীন সাংবাদিকতায় এটা কত বড় সরাসরি হস্তক্ষেপ তা সহজেই অনুমেয় না। তবে হুমকির কারণ উল্টে গেছে। .

    জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আইনে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট নন। সংবিধানে বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো মৌলিক আইন। বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে কোনো আইন অসাংবিধানিক হবে।