সরেজমিন: নারায়ণগঞ্জ শহর।আহা! কত দিন পর ভোটের আনন্দ
অপেক্ষা ! লাইনে প্রায় দুই ঘণ্টা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১নং ওয়ার্ডের হাজী শামসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবশেষে ভোট দিতে সক্ষম হন খোকন মিয়া। তার পরেও খুশি। কারণ তিন বছর আগে সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে এলেও ভোট দিতে না পেরে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি চলে যান। এবার ভোট দিতে পেরে আনন্দের কথা মনে পড়ছে খোকন মিয়ার। রবিবার নাসিকের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা এমন উচ্ছ্বাস প্রত্যক্ষ করেছেন। ১নং ওয়ার্ডের আরেকটি ভোটকেন্দ্র ফুলকলি বিদ্যালয়। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখের মতোই খুশি ভোট। এত খুশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। কোনো অশান্তি নেই, কোনো বাধা নেই।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা, হত্যা, সন্ত্রাস ও কারচুপির ঘটনা স্বাভাবিক হলেও এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে বিরল ব্যতিক্রম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের কেন্দ্রে এ চিত্র আঁকা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে রাখতে হয়েছে। এরপরও অধিকাংশ ভোটার কেন্দ্র ত্যাগ করেননি। অনেক কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা বিকাল ৪টার পর ভোট দিয়েছেন।
গত কয়েক বছরে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যায় একচেটিয়া আধিপত্য দেখা গেছে। এখানে নারায়ণগঞ্জে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ছিল বেশি। তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির পদ হারানো তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি প্রতীকের ব্যাজ ছিল সংখ্যায় অনেক কম। তবে বেশির ভাগ বুথে হাতির পোলিং এজেন্টরা সমান তালে ছিলেন।
ফুলকলী স্কুলের নৌকার এজেন্ট মো. সাখাওয়াত ও হাতির এজেন্ট মো. সাগর তার পাশাপাশি ভোটের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাগর বলেন, কোনো বাধা বা চাপ নেই। আমি কোনো বাধা ছাড়াই আমার দায়িত্ব পালন করছি। পাশ থেকে সাখাওয়াত বলেন, দেশ যাই হোক, নারায়ণগঞ্জ আলাদা এলাকা। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাই মিলেমিশে বসবাস করে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন সাতজন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের এজেন্ট কেন্দ্রে পাওয়া গেছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানান, বাকি প্রার্থীরা এজেন্ট দেননি।
নারী কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে ভোট দেওয়া লাইলী বেগম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ৫৫ বছর বয়সী ওই নারী বলেন, “সংসদ নির্বাচনেও এই কেন্দ্রের ভোটার ছিল। আমি দুপুরে এসেছিলাম। পুলিশ তাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। তাকে তিরস্কার ও হত্যার হুমকি দেয়। এবার কেউ নেই। তাকে থামালেন।কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রে আসার জন্য রিকশা করে বাড়িতে পাঠিয়েছে।তিনি ক্যাম্প বসিয়ে ভোটার নম্বর খুঁজতে স্লিপ করেছেন।সে পান করেছে।’
কেন্দ্রে হাতির এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কোন বাধা ছিল না। এটা লাঞ্চ টাইম, তাই হয়তো অনেক লোক চলে গেছে। ‘
বুথ নং ২ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মো. গোলাম রসূল নাঈম বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। শোরগোল শুনে তিনি বাইরে এসে দেখেন র্যাবের টহল দল এসেছে।