• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ। ৫৮ জন সচিবকে চিঠি দিয়েছেপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

    টানা দেড় দশক অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন তুলে ধরতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আসন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

    তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাংবিধানিক এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের চিঠি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন কমিশন ও পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের আলাদা সত্তা রয়েছে। সরকার প্রধানের কার্যালয় যেভাবে নির্দেশনা দিতে পারে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, সাংবিধানিক বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাহী বিভাগের অধীনে নয়।

    সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ধরনের চিঠি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া উচিত নয়। কারণ কমিশন এখন আর নির্বাহী বিভাগের অংশ নয়। এমন চিঠি নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠবে।

    তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত সরকারকে বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া, যাতে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো নির্বাচন কমিশনের কথা মনে না থাকে।

    জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও লেখক ফিরোজ মিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্দেশিত উন্নয়ন কাজের প্রচারে অংশ নিলে বিষয়টি পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাই নির্বাচন কমিশন ও পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের চিঠি দেওয়া উচিত নয়।

    তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এমন সময়ে তারা সরকারের উন্নয়ন কাজের প্রচার করলে জনমনে সন্দেহ তৈরি হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নমূলক কাজ প্রচারে উদ্যোগ নিতে পারে।

    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক শাহিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জনগণের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রচারণার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ও নির্দেশিত প্রকল্পসহ রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সকল প্রকল্প, কর্মসূচি, উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ও ডিজিটালাইজেশন। ২০০৯-২০২৩ সময়কালে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগের অধীনে থাকা মন্ত্রীকে বই আকারে প্রকাশ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ তথ্য বই আকারে প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে দ্রুত বিতরণ করতে বলেছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের অর্জন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের উন্নয়ন কাজের বার্ষিক প্রকাশনা সংগ্রহ করে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কাজ প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচিব বলেন, গত সচিবদের বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের একই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেড় দশকের উন্নয়ন কাজে অনেক বড় মাইলফলক অর্জন করেছে। এসব বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।

    তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, সারা বছর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি আমাদের কাজের অংশ। এখন নতুন নির্দেশনার পর কমিটি গঠন করেছি। তারা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রেকর্ড করে প্রকাশ করবেন।