সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়তে পারে ৮-১০ শতাংশ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলায় সরকারি কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হতে পারে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা ঘোষণা করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ৫ শতাংশ। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কিছুটা কম। মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনায় সরকার ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর কথা ভাবছে।
সূত্র জানায়, বাজেট বক্তৃতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার ঘোষণা থাকবে। তবে বেতন বৃদ্ধি এবং কী হারে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হবে জুনে বাজেট ঘোষণার পর। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে গেজেট জারি করা যাবে। কিন্তু যখনই বেতন বৃদ্ধির গেজেট জারি হবে, জুলাই মাস থেকে তা কার্যকর হবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, দুই বছরের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন বেতন স্কেলের দাবি উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে তাদের জন্য মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অধীনে সরকারি কর্মচারীর মোট পদের সংখ্যা ১২ লাখ ৪৬ হাজার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ আনুমানিক বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু মোট পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার পদ। ফলে আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতার পুরো বরাদ্দ ব্যয় হবে না। তাই এই বরাদ্দ থেকে মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয় সাপেক্ষে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি সম্ভব হতে পারে। বা বাড়তি খরচ থাকলেও তার পরিমাণ হবে খুবই সামান্য। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন খাতে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে এবং সংশোধিত বাজেটে রাখা হয়েছে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৫ সালে, বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১০০% পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসে কর্মচারীরা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রেখে ওই বেতন স্কেলে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বাড়লেও ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন কর্মচারীরা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বা অর্থসচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট বা বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার বাড়ানোর বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা চাইবেন। এছাড়া ২০তম গ্রেড থেকে ১ম গ্রেড পর্যন্ত সকলের জন্য একই হারে বেতন বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়েও নির্দেশনা চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার ভিত্তিতেই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত মে-এপ্রিল ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে সরকারী মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে।