জাতীয়

সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে টানা বৈঠকে এসএসবি

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে নিয়মিত বৈঠক করছে। গত জানুয়ারি থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত এ ধরনের ৪৩টি বৈঠকের তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের একই সময়ে মাত্র ২৩টি (এসএসবি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রতি মাসে গড়ে ২২ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র পাঁচ দিন সভা হয়েছে পদোন্নতির জন্য।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রচার সভাও হয়েছে। বৈঠক চলবে মাসের বাকি দিনগুলোতে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষণা অনুযায়ী আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর যেকোনো পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে ইসির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে।

তাই এসএসবি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব এবং ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবে পদোন্নতি সম্পন্ন করতে চায়। এ দুটি পদে পদোন্নতির জন্য নিয়মিত, পুলড, বঞ্চিতসহ ৮৪৮ কর্মকর্তার যাচাই-বাছাই চলছে।

এর আগে প্রশাসন ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের ১১৪ জন কর্মকর্তাকে গত বছরের মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং গত বছরের নভেম্বরে প্রশাসন ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচের ২৫৯ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর ২২ ব্যাচের ২২১ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

তখন ধারণা করা হয়েছিল, সরকারের নীতিনির্ধারণী পদগুলোর মধ্যে একটি অতিরিক্ত সচিব পদে নির্বাচনের আগে আর কোনো পদোন্নতি পাবেন না। কিন্তু এখন এসএসবি ১৮তম ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির তথ্য সংগ্রহ করছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২৯ ব্যাচের পদোন্নতির কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। ১৮ ব্যাচের কাজও শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদোন্নতির কাজ শেষ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত কাজ করছি।

এর সঙ্গে তফসিলের কোনো সম্পর্ক নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবের অনুমোদিত পদ একটি। তবে দুই সচিব কাজ করছেন। অতিরিক্ত সচিবের দুটি অনুমোদিত পদ রয়েছে। ১৩ জন কর্মরত। একইভাবে যুগ্ম সচিবের ছয়টি পদে ১৯ জন কর্মরত আছেন। উপসচিবের ২৫টি পদে ৪৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন।

আর মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৪০টি। এই পদে ৩৮৪ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ ৩৩২। কর্মরত আছেন ৯৩৯ জন। উপসচিব পদে ১,৪২৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। কর্মরত এক হাজার ৪৭৭ জন।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, যেহেতু পদ ছাড়াও অনেক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, এসএসবি মিটিংও বেশি হচ্ছে। প্রয়োজনে মিটিং করা যেতে পারে। কারণ (এসএসবি) কত করতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। পদবিহীন এত পদোন্নতির প্রধান উদ্বেগ হল, সিভিল সার্ভিসের শৃঙ্খলা নষ্ট হবে, ঐক্য ও মর্যাদার জায়গা দুর্বল হবে। তিনি বলেন, সিনিয়র সহকারী সচিব বা উপসচিবের যেখানে কাজ করার কথা সেখানে যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব কাজ করলে তাদের পদমর্যাদা একটু কমে যাবে। দেখতেও ভালো লাগে না।

প্রশাসনের শীর্ষ কমিটিতে পদাধিকার বলে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিব। মন্ত্রীর কার্যালয়। এসএসবি সভা পরিচালনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সহায়তা করেন।

১০ মাসে মিটিং করতে খরচ হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা

এসএসবিতে আট সদস্য রয়েছে। সভায় সদস্যদের সম্মানী দেওয়া হয় আট হাজার টাকা। গত ১০ মাসে ৪৩টি সভায় সদস্যদের দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বৈঠকের সদস্য, এজেন্ডাভুক্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ, শাখা ও উপ-বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রায় ৫০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি সভায় প্রায় ৫০ হাজার টাকার খাবার কেনা হয়। এতে অন্তত ২০ লাখ টাকার খাবার কিনতে হয়েছে। ফলে সদস্যদের সম্মানী বাবদ মোট ৪৩টি সভায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।