সমৃদ্ধির হাতছানি কাজু বাদামে
বাদাম পার্বত্য উপজাতির জন্য খুব সাধারণ পণ্য ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট কাগজ ‘মাওরুম’ পত্রিকার সম্পাদক দিপায়ণ খিসা একটি পুরানো গল্প বলেছেন। পাহাড়ে বেড়ে ওঠা বান্দরবানের এই আদিবাসী তখন পঞ্চম শ্রেণিতে। বাড়ির পাশেই একটি বাদাম গাছ ছিল। এই আকর্ষণীয় ফলটি পেকে লাল হয়ে গেলে, তখন সে খোসা ছাড়িয়ে নুন এবং গোলমরিচ মিশিয়ে খেতেন। বাদামের উপরে এই অংশটি বেশ সুস্বাদু ছিল। তবে লাল অংশের বাদামগুলি এত মূল্যবান, দীপায়ন খিসা কখন বড় হয় তা জানেন। উদ্যোক্তারা এখন পাহাড়ের গায়ে ফেলে দেওয়া বাদামের মুষ্টিমেয় সমৃদ্ধি দেখছেন কৃষকরা কৃষিতে আগ্রহী। পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে চাষ অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। বর্ধমান উদ্যোক্তা। বিপুল দেশীয় চাহিদা মিটিয়েও বাদাম রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যানতত্ত্ব শাখার পরিচালক মো:কবির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী কৃষিকে ভেঙে আধুনিক কৃষি সাম্রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে। প্রাথমিকভাবে, কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্ষয় ও ভূমিধস রোধে পাহাড়ি অঞ্চলে বাদাম গাছ লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল, পরিবেশ বান্ধব এবং লাভজনক এবং পাহাড় এবং সমভূমির পতিত জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাদাম তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমাদের দেশের জলবায়ু বাদাম চাষে বেশ সহায়ক।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পাঁচ বছর আগেও বাদাম বিক্রি, বিপণন বা প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। শুধুমাত্র রাঙ্গামাটিতে দেশীয় উপায়ে কিছু প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়েছিল। অনেক পার্বত্য কৃষক একবার দাম না পেয়ে বাদাম গাছ কেটে ফেলেন। চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তানভীর ২০১০ সালে পাহাড়ে হেঁটে এই বাদাম চোখে পড়ে। ২০১০-১১ অর্থবছরে কাঁচা বাদামের চালানের রফতানির পরে এর মূল্য অর্জন শুরু হয়েছিল। জুন ২০১৬সালে শাকিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গার দেলপাড়ায় ‘গ্রিনগ্রিন ক্যাসিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি’ নামে একটি কারখানা স্থাপন করেন। প্রাথমিকভাবে এটি কেবলমাত্র ১০ জন শ্রমিক দিয়ে শুরু হয়েছিল তবে এখন এটির ৬৫ জন শ্রমিক রয়েছে। এই কারখানার বাদামও প্রথমবারের মতো দেশ থেকে রফতানি করা হচ্ছে। শাকিল আহমেদের সাফল্য দেখে দেশে আরও ছয় জন বাদাম কারখানা স্থাপন করেছেন। নীলফামারীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুটি প্রসেসিং প্ল্যান্টও রয়েছে।
কৃষকরা কৃষিতে আগ্রহী। বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চলে এখন বাদামের চাষ হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলির উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা প্রদান করে।
কৃষিমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চল পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলে বাদাম চাষ চলছে। বাংলাদেশে বাদামের আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৫ লাখ হেক্টর, যার বেশিরভাগ অংশ পার্বত্য অঞ্চলে। দুই হাজার হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ শুরু হলে দেশে বাদামের উৎপাদন দাঁড়াবে পাঁচ লাখ টনে। বান্দরবানে বর্তমানে ১,৭৯৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। যেখানে ২০১৮ সালে দেশটি ৯১৬টন উত্পাদন হয়, ২০২০ সালে এটি এক হাজার ৩২৩ টনে বেড়েছে। অন্য কথায়, তিন বছরে ফলন ৩২ শতাংশ বেড়েছে।
কৃষিমন্ত্রী মো: আবদুর রাজ্জাক বলেছিন যে, কাঁচা বাদাম আমদানি শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয় যাতে দেশে বাদামের জন্য একটি প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করা যায়। এনবিআর সম্প্রতি প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের কাঁচা বাদাম আমদানিতে শুল্ক প্রায় ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫-৭ শতাংশ করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত হবে। শুধু প্রক্রিয়াজাত নয়, দেশে বাদাম চাষ জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তিনি আরও বলেন, এ বছর কৃষকদের মাঝে ৫০,০০০ বাদামের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, কম্বোডিয়া থেকে প্রায় পাঁচ টন হাইব্রিড বাদাম বীজ আমদানিতে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এসব বীজের মাধ্যমে প্রায় ছয় লক্ষ চারা উৎপাদন সম্ভব হবে।