বাংলাদেশ

সড়কে কেড়ে নিল খুলনার ৪ প্রাণ, শোকের ছায়া পরিবারে

পরীক্ষার কাগজ হাতে নেওয়ার স্বপ্ন, আদালতে ন্যায়বিচার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অথবা প্রিয়জনকে ডাক্তারের কাছে দেখে বাড়ি ফিরে আসার আশা, সবই থমকে গেল খুলনার ডুমুরিয়ার ঝিলেরডাঙ্গায়। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে, একটি দ্রুতগামী পিকআপ ভ্যান মুহূর্তের মধ্যে চারজনের প্রাণ কেড়ে নিয়ে একটি হৃদয়বিদারক ও শোকাহত পরিবারকে রেখে গেছে। নিহতরা হলেন রুস্তম শেখ (৬০), হাফিজ সরদার (৫৩), রুনা আক্তার (২৫) এবং ইজিবাইক চালক মুজাহিদুল (২০)। সামিয়া খাতুন ২০২৫ সালের এইচএসসির শেষ ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। তার দাদা রুস্তম শেখ তাকে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। কিন্তু খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ঝিলেরডাঙ্গায় তাদের জীবন থেমে যায়। ভয়াবহ ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই রুস্তম শেখের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত সামিয়াকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার দুই পা রক্তাক্ত, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রক্তদান চলছে। কিন্তু তাকে এখনও জানানো হয়নি যে তার প্রিয় দাদা আর নেই। রিনা আক্তার, তার আট বছরের ছেলে আসিবুর এবং খালা মিনা আক্তার একই ইজিবাইকে ছিলেন। আদালতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মিনা আক্তার মারা যান। রিনা আক্তার হাসপাতালের ওটিতে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। আর মেঝেতে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়া ছোট্ট আসিবুর মাঝে মাঝে আধখোলা চোখে তাকায়, কিন্তু বুঝতে পারে না তার মা কোথায়, তার খালা কোথায়। খরশন্ডা সাহাস গ্রামের হাফিজ সরদার তার স্ত্রীর জন্য ডাক্তারের কাছে খুলনা যাচ্ছিলেন। পরিকল্পনা ছিল চিকিৎসার পর তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার। কিন্তু ভাগ্য ভিন্ন ফলাফল লিখে রেখেছিল। খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সী তরুণ ইজিবাইক চালক মুজাহিদ মোড়ল। তার প্রতিদিনের দায়িত্ব ছিল যাত্রীদের তাদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আজ আর পারছেন না। খুলনা মেডিকেল কলেজে যাওয়ার পথেই তার জীবন থেমে গেল। পরিবারের একমাত্র সন্তান তিনি। তার স্ত্রী গর্ভবতী। একসাথে চারটি মৃতদেহ, চারটি পরিবারের আলো নিভে যাওয়া, আট বছরের একটি শিশু অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা, সবকিছু মিলিয়ে খুলনা মেডিকেলে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ডুমুরিয়ার বাগদারি, খারশোন্ডা সাহাস এবং হাসপাতাল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়স্বজনের কান্নায় চারপাশ ভরে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আটজন যাত্রী নিয়ে ইজিবাইকটি ডুমুরিয়ার বাজার থেকে খুলনা শহরের দিকে যাচ্ছিল। ঝিলেরডাঙ্গায় পৌঁছানোর পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী পিকআপের সাথে সংঘর্ষ হয়। ইজিবাইকটি তাৎক্ষণিকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। দুর্ঘটনার পর পিকআপ ভ্যানের চালক এবং সহকারী পালিয়ে যান। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।