সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙ্গানো হচ্ছে বেশি
সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে যে পরিমাণ পাকা আসছে, মানুষ ভাঙছে তার চেয়ে বেশি। বিশেষ করে পোস্ট অফিসে সংরক্ষণের কাগজ বিক্রির প্রবণতা অনেক বেড়েছে। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭১ কোটি টাকা কম। এর অর্থ হল সঞ্চয় বন্ড বিক্রির বিপরীতে খালাস করা হয়। সঞ্চয়পত্র থেকে প্রথম তিন মাসে সরকারি ঋণ ৩৩১ কোটি টাকা। বেশির ভাগ জিনিসের দাম বাড়ায় দৈনন্দিন খরচ মেটাতে অনেকেই সঞ্চয়পত্র তুলে নিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৬,৯৭৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। ফলে নিট বিক্রি কমেছে। আগস্টের আগের মাসে নিট বিক্রি ছিল মাত্র 8 কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে জুলাই মাসে আয় বেড়েছে ৩৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রথম তিন মাসে পোস্ট অফিসের নিট ঋণ কমেছে ৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। ৫ বছরে ৫৬৩ কোটি বাংলাদেশি সেভিংস পেপার কমেছে। তবে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে ৩,১৬৮ কোটি টাকা, মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে ১,৮৬৪ কোটি টাকা এবং পেনশনভোগী সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়েছে ৩৬৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের বাজেট ব্যয়ের অন্যতম খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। ব্যাংক ঋণের সুদহারে অত্যধিক বৃদ্ধি সত্ত্বেও, সরকার এখনও দুই এবং পাঁচ বছরের বন্ডে 8 শতাংশের কম ঋণ নিচ্ছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ শতাংশের কম। ফলে শর্ত আরোপ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য সরকার গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়। এর আগে, ২ লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা সব পর্যায়ে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আগে যেখানে সব ধরনের সেভিংস পেপারে বিভিন্ন সীমা সাপেক্ষে কেনার বিকল্প ছিল। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় কেনাকাটার সুযোগ থাকলেও এখন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাকঘর সর্বত্র একই সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে সে সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ২১ হাজার ৫১১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মূল পরিশোধ ছিল ২১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নিট ঋণ বেড়েছে ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। গত মাসে আগস্ট শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকসহ সার্বিক সঞ্চয়ের প্রবণতা কমেছে। আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতের আমানত মাত্র ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.০৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ সুদের হার সীমা অপরিবর্তিত রয়েছে। এ কারণে ব্যাংক আমানতের গড় সুদের হার বাড়ছে না। গত আগস্টে আমানতের গড় সুদ ছিল ৪.০৭ শতাংশ। তবে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে।