• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সংসদে আলোচনা।সংবিধান সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্যের দাবি

    আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জাতীয় সংসদে সংবিধান সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে দুই দলের সভাপতিরা এ লক্ষ্যে বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।

    ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তার দাবির সমর্থনে কিছু নিয়ম উল্লেখ করেছেন, যা তিনি বলেন, সংবিধানকে একটি ধর্মীয় মোচড় দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের বিধানগুলো সরকার পরিচালনা ও ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে প্রধান নির্বাহীর (প্রধানমন্ত্রী) একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।

    শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক এই সদস্যও সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই সংবিধান পর্যালোচনা করা দরকার। এই সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে সংবিধান পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য আমরা সংসদ নেতাকে অনুরোধ করছি। যেখানে আমরা ধর্মীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছু পুনর্বিবেচনা করতে পারি। ‘

    তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংবিধানের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের মধ্যে সংসদীয় ব্যবস্থার অন্যতম সেরা সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, তার আমলে এই সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয়। আর সামরিক শাসকরা তাদের ক্ষমতার স্বার্থে এবং পাকিস্তানি রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভোঁতা ছুরি দিয়ে সংবিধানকে হত্যা করেছিল। যদিও সংবিধানের দ্বাদশ এবং পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক চরিত্রকে কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছে, তবে এমন বিধান রয়েছে যা সরকার পরিচালনায় প্রধান নির্বাহীর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সংবিধানকে একটি ধর্মীয় রূপ দিয়েছে।

    মেনন বলেন, দ্বাদশ সংশোধনীর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের সময় যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা তারা গ্রহণ করেননি। যার কারণে সম্প্রতি ক্ষমা চেয়েছেন অলি আহমেদ।

    নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি ও বাম দলের সমালোচনা করে বামপন্থী এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাম দাবিদারদের বন্ধুরা নির্বাচনী সংস্কারের কথা বললেও এখন তাদের প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন সরকার। তাদের কেউ কেউ যুগপৎ সংহতি আন্দোলনের নামে সরাসরি বিএনপির সঙ্গে হাত মেলাবেন বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।

    চলমান ইউপি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ ও পেশিশক্তি এবং প্রশাসন ও ইসির দুর্বল ভূমিকা পুরো নির্বাচনে জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। নারায়ণগঞ্জের মতো ব্যতিক্রমী নির্বাচন জনগণকে আশার সঞ্চার করেছে। জাতীয় নির্বাচনেও মানুষ তাই দেখতে চায়। আর সেটা সম্ভব এই সরকার বহাল রেখেই।

    তিনি বলেন, দেরিতে হলেও সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন এনেছে। কিন্তু আইনটি অসম্পূর্ণ, সংশোধন করা দরকার। অন্যথায় বিতর্ক চলতেই থাকবে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ভূমিকার সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী বলেন, একজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা যায় না। শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করা যাবে না।

    তিনি বলেন, দুর্নীতির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার নীচ থেকে আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য আমরা লজ্জিত। এই সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ধন না দিলে ফাইল নড়বে না। এখন সেই দুর্নীতির জ্বালানির দাম এত বেড়ে যাওয়ায় ফাইল সরানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

    রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি র‌্যাবকে নিয়ে অপবাদ দিচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো যুক্তিতে সমর্থিত নয়। এটা বন্ধ করতে হবে।

    ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও গঠনতন্ত্র পর্যালোচনায় বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সংবিধান পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সংবিধান পুনর্বিবেচনা ও সংস্কার করা দরকার।

    তিনি বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিচ্ছেন। কাঁটা নিয়ে সমস্যা। ভিসির যুক্তিহীন বক্তব্য, আচরণ দুঃখজনক।

    ইনু বলেন, সময়ে সময়ে জঙ্গি সহিংসতা ও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। এতেই প্রমাণিত হয় হেফাজত-জামায়াত-জঙ্গীর কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই সাম্প্রদায়িক চক্র বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে হারাম বলে। আর ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে গেলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে হালাল বলেন। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

    মন্তব্য করুন