সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ নির্দেশনা
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সংসদ সদস্যদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
রোববার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ বৈঠক চলে। বৈঠকে দলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দলীয় সংসদ সদস্যরা ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তারা বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা চলছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমি যেভাবে ব্রাজিল ছেড়েছিলাম, তা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
এখন আমাদের দেশে অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। তাই ক্ষমতায় থাকার লোভে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকেই হয়তো মনোনয়ন পাবেন না। কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা বা বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন না। যারা করবে তারা তাদের রাজনীতিতে হেরে যাবে।
কাউকে চেয়ার দেওয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ যোগ্যতায় বিজয়ী হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে অতীতের মতো নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। না হলে আরও অনেক দলীয় নির্বাচন আসবে। ফলে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক।
বিএনপির আন্দোলন ও ২৮ অক্টোবর ইস্যু নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা আন্দোলন করুক, আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে।
সূত্র জানায়, সভায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন। অনেক সংসদ সদস্য তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তারা থেমে নেই। জামায়াত সারাদেশে আঞ্চলিক মিডিয়াকে অর্থায়ন করছে। তারা সরকার, আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যা খুশি লিখছেন। প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দেবেন না, তবে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যে জিততে পারে তাকেই মনোনয়ন দিতে হবে।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হাজার বছরে একবার এসেছেন। ভবিষ্যতে আর একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু তারপরও প্রতিটি জেলায় মোস্তাক রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে কাজ করছে। মোস্তাকদের চিহ্নিত করতে হবে, তাদের থেকে সাবধান।
রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী নিজ জেলায় দলীয় কোন্দলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন। লালমনিরহাটের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় দলীয় ঐক্য থাকলেও মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে আসা অনেকে সমস্যার সৃষ্টি করে। ঢাকায় বসে এলাকায় গ্রুপিং তৈরি করছে। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক মনোনয়নপত্র বেরিয়েছে। সারা বছর তারা মাঠে থাকে না, নির্বাচন আসলে তৎপরতা বাড়ায়। তারা সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে বলেন, এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে সব তথ্য আছে। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। দলের ভিতরে ও বাইরের সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।