• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ।রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমার সহযোগিতা না করলে বিকল্প পথ রয়েছে

    মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। মিয়ানমারে প্রবেশাধিকার না থাকায় প্রমাণ সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তদন্তে মিয়ানমার সহযোগিতা না করলে বিকল্প পথ খুঁজবে আইসিসি। সেই বিকল্প পন্থা হতে পারে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতা।

    শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এ তথ্য জানান। চারদিনের বাংলাদেশ সফর শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

    এই বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন তারা। রোহিঙ্গাদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আইসিসির তদন্তকারীরা সতর্কতার সঙ্গে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ঘটেছে, যার কারণে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেজন্য তিনি মিয়ানমারে নির্যাতনের ঘটনার শিকার, প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের পাশে রয়েছেন।

    কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবন দেখেছেন। গত মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ ও দুর্দশা বেড়েছে। তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা খেতে পারেন। এ ছাড়া একজন রোহিঙ্গা প্রতিদিন ৯ টাকা করে সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু এখন একটি ডিমের দাম ১২ টাকা। তাহলে এই টাকা দিয়ে তারা কীভাবে খাদ্য সহায়তা মেটাবে? এটি একটি মানবিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখানে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ বা আইসিসির সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।

    দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন উল্লেখ করে করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশিরাও ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এই ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ এবং এদেশের সকল মানুষের প্রশংসা করা উচিত।

    রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ জীবন, শিশুদের শিক্ষা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহ করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি কোনো দাতা বা উন্নয়ন সংস্থা, এমনকি UNHRC-এর প্রতিনিধি নন। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কিন্তু এই বিষয়গুলো তাদের দেখা উচিত। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার।

    রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার কবে শেষ হবে জানতে চাইলে করিম খান বলেন, বিচারের চূড়ান্ত তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা রোহিঙ্গা নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা এই বিচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী বাংলাদেশ সফরে প্রমাণ সংগ্রহে অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইসিসির কাউন্সেল এসা ফাল এবং আইসিসির চিফ কাউন্সেল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার সান্তাল ড্যানিয়েলস। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধান কৌঁসুলি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ শনিবার সকালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।