সংকটের অবসানে দ্রুত নির্বাচন চায় রাজনৈতিক দলগুলো
সময় যত যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের দাবি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনের দাবি করছে। সম্প্রতি দলটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতারনাথ মঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এসব দলের নেতারা বলেন, সরকার দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশ আরও বড় সংকটের মুখে পড়বে। দ্রুত নির্বাচনের দাবি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আগামী বছর নির্বাচন হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান বলেন রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচনের দাবি অব্যাহত রাখবে। কারণ নির্বাচিত সরকারই প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। বুধবার (আজ) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবেদন দাখিল হলে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাহলে বিএনপির অবস্থানও জানা যাবে। এই মুহুর্তে, সবকিছু পরিষ্কার নয়। তবে বিএনপি যেহেতু একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি, তাই তারা এ ধরনের দাবি করে। আমার মনে হয় তারা সেই কৌশল অবলম্বন করেছে।’ আরও অনেক দলও চায় দ্রুত নির্বাচন- এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যদি ধরে নিই নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি, তাহলে অনেক সময় । তাই তারা দাবি জানাবেন এবং নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন। যদিও সব দল একইভাবে কথা বলছে না। নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে জামায়াত দাবি করেনি। অন্য দলের অবস্থানও জানা যায়নি।’
এদিকে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউএনডিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়নে তারা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কাছে সহায়তা চেয়েছেন। এর আগে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসি। ফলে ইসি যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাও জানা গেছে।
গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে তাদের সবার সঙ্গে আমরা ইতিমধ্যে কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন হওয়া দরকার। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কারো কোনো দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডানপন্থী যত দল আছে- সবাই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। এরই মধ্যে দ্রুত নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিপিবি। আর জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন নিয়ে খুব একটা পার্থক্য আছে বলে আমি দেখছি না। কয়েকদিন আগে তিনি (দলের আমির শফিকুর রহমান) বলেছেন, নির্বাচন করতে হবে, আগে জাতীয় সংসদ হতে হবে। তাই আমি কোনো পার্থক্য দেখি না।’ বলাবাহুল্য, এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবিতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে নিজের দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
অন্যদিকে, নিষিদ্ধ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দূরে থাকা জাতীয় পার্টি শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনে করেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল। বর্তমান সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ; যে কোন সময় বড় বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই মুহূর্তে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক এবং অত্যন্ত ফ্যাসিবাদী। আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। আমাদের মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানেও আমাদের বার্ষিকী উদযাপন করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের নেতাকর্মীদের কোথাও কোথাও হয়রানি করা হয়েছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা কীভাবে নির্বাচন করব? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণতন্ত্র ফোরামের শরিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব নির্বাচন ইস্যুতে সরাসরি কিছু বলেননি।
Do Follow: greenbanglaonline24