• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    শুক্রবার-শনিবার বিএনপির গণমিছিল ও পদযাত্রা

    খুব শিগগিরই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলনের রোডম্যাপ আরও এগিয়ে নেয় দলটি। আগামী মাসের শুরু থেকেই রাজপথে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চান তারা। তবে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শুক্র ও শনিবার আবারও গণমিছিল ও পদযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানি, আদালত চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকার প্রবেশপথে আরেকটি অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে চায় দলের হাইকমান্ড।

    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে মিছিল করছে, তখন সরকার তার পুরনো কায়দায় গুম, গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২৮শে জুলাইয়ের গণমিছিলের পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। একদিকে অবৈধ সরকার জনগণকে বিচ্ছিন্ন করছে, অন্যদিকে দেশের নিরীহ গণতন্ত্রকামী জনগণের ওপর গুলি, গুম, খুনসহ সব ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে নিজস্ব বাহিনী। বিরোধী আন্দোলনে তারা দিশেহারা। কিন্তু সব নির্যাতনের পরও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এ সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

    জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় চাপে রয়েছে বিএনপি। এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলায় সক্রিয় নেতাকর্মীদের নাম উঠে এসেছে। যে দিনের ভিডিও, ছবি দেখে নেতাকর্মীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে সাদা পোশাকের পুলিশ। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ অনেক দায়িত্বশীল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের তালিকায় রয়েছে আরও অনেকে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের সাথে জড়িত থাকায় ডিবি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গ্রেফতার আতঙ্ক কাজ করছে দলের তৃণমূল পর্যন্ত। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে।

    ওই দিনের ঘটনা ছাড়াও বিএনপির চলমান আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীরা। মাঝপথে যেমন বিনা বাধায় সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়েছিল, এখন প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি দায়িত্বশীল নেতাদের কর্মসূচি থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, সরকার চারদিক থেকে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানে তারা আগামী দিনে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনে সরকারকে চাপে উল্টো

    শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমমনা নেতারা শান্তিপূর্ণ কিন্তু কার্যকর কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে আদালত চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবরোধ বা অবস্থান কর্মসূচি, সচিবালয়ে অবস্থান বা অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচিও রয়েছে। ঢাকায় কর্মসূচিতে, চলো চলো ঢাকা চলো এবং আবারও গণসমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। তবে কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্রমঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে।

    এ ছাড়া এক দফা আন্দোলন সফল করতে বিভিন্ন পেশাজীবী, ছাত্র, শ্রমিক সংগঠনকে আরও সক্রিয়ভাবে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সমমনা দল ও সংগঠনের সঙ্গে কীভাবে ঐক্য করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করেন নেতারা।

    দলটির নেতারা বলেন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেভাবে দলীয় ভূমিকা গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবারও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে, তাতে সমসাময়িক আতঙ্ক বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা। অনেকে গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন। তবে তাও সাময়িক। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর মনোভাবের কারণে কোনো নেতা-কর্মী সঠিক পথে ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা নিয়ে এসব শূন্যতায় অবস্থান করছেন না। এত কিছুর পরও চেতনা না হারিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির হচ্ছেন তিনি। আর এটাকেই আশার আলো দেখছেন দলের হাইকমান্ড।

    জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য আগামী ২৩ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যেতে পারেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে চিকিৎসা শেষে আগামী ৩০ জুলাই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এ সময় শান্তিপূর্ণ ও ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছে দলটি। একদিকে নেতাকর্মীদের শক্ত রাখতে, অন্যদিকে নিজেদের সংগঠিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।