জাতীয়

শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, হতাশায় সচিব পদোন্নতি প্রত্যাশীরা

সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে নিয়মিত সচিব পদে এখন অন্তত ৯ জন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক রয়েছেন। অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিলে সচিব হওয়ার যোগ্য সমসংখ্যক নতুন কর্মকর্তা এই পদ পেতেন। এখন তারা বঞ্চিত। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার সচিব ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। বর্তমানে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে ৮৬ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রভাব পড়েছে পুলিশ বিভাগেও। আইজিপি বা র‌্যাবের ডিজি পদে সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেখা যায় না। কিন্তু এ দুটি পদে এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে বলে জনপ্রশাসনের সঙ্গে জড়িতদের ধারণা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর অন্তত ২৩ জন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। জুলাই মাসের মধ্যে ১২ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আটজন সচিব চলে গেছেন, বাকি চারজন অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের এক-তৃতীয়াংশ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এই মাস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১১ জন সচিব অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ চুক্তিভিত্তিক চাকরি পেতে পারেন।

উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে অতিরিক্ত পদোন্নতির জন্য সরকারকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সচিব পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সচিব পদে আগ্রহী মেধাবী কর্মকর্তারা। তাকে ৫৯ বছর বয়সে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিতে হবে। আপনি যদি একজন মুক্তিযোদ্ধা হন, আপনার চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সম্প্রতি প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি প্রশাসনের নবম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। এই পদটি বেসামরিক প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ। গত এক দশকে এ পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। প্রশাসনের শীর্ষ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদেও একই অবস্থা। বর্তমানে এই পদে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর ৫৯ বছর পূর্ণ করবেন। বিশেষ ব্যতিক্রম না হলে তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কিছু এখানে অন্যান্য অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কথা বলা হয়. উদাহরণ হিসেবে একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের স্ট্যান্ডার্ড পিরামিড কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে অষ্টম, নবম ও দশম ব্যাচের কর্মকর্তারা শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কোনো কারণে মাহবুব হোসেন নিয়োগ না পেলে এ পদে জনপ্রশাসন বিভাগের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব, বাণিজ্য, এনবিআর, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রতিরক্ষা, জননিরাপত্তা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, গণপূর্ত সচিবরা চুক্তির ভিত্তিতে রয়েছেন। এ ছাড়া এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রতিযোগিতা কমিশন, রাজউকসহ একাধিক অনিয়মিত পদে এক ডজনের বেশি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে প্রশাসনের ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তা সর্বশেষ সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ইতোমধ্যে এই ব্যাচের ১৫ জন কর্মকর্তাকে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সাবেক আমলা, বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি সরকারে আছি, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাও আমার সিদ্ধান্ত। তাই এ বিষয়ে অন্য কোনো মন্তব্য করা অনুচিত। তবে এ ব্যবস্থা থাকা উচিত কি না তা বলতে পারেন প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন মনে করেন, নিয়মিত সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে বিভিন্ন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক সচিবদের নিয়মিত প্রশাসনের সঙ্গে মেলাতে নারাজ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা থাকবে কি হবে না তা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না.

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, “দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে উন্নয়ন কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের ব্যস্ত সময় কাটবে। তখন প্রয়োজন হবে।