শীতার্ত মানুষ কাঁপছে শীতবস্ত্র ‘দরপত্রে’
কুয়াশায় ঢাকা সূর্য, হিমেল হাওয়া বইছে। পৌষের শেষার্ধে থার্মোমিটারের পারদ নেমে যাওয়ায় কাঁপছে রাজধানীসহ সারাদেশ। ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার বিকেল পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় সূর্যের দেখা মেলেনি। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় সারা মাস মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
তবে শীত মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগ থাকলেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থও অপ্রতুল। শীত চলে এলেও কম্বল কেনা হয়নি। অন্যান্য বছরের মতো বেসরকারি উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝড়-বন্যা মোকাবিলায় সরকারের বড় ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও শীতকে ঘিরে তেমন দেখা যায় না। ফলে আগাম প্রস্তুতির অভাবে শীতের কাঁপুনি শুরু হলেও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পাচ্ছেন না অসহায় মানুষ।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রার চেয়ে ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার কারণ হল উত্তরের ঠান্ডা বাতাস। আরও কয়েকদিন সারাদেশে এ ধরনের ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই জানিয়েছিল, চলতি মৌসুমে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। এ অবস্থায় শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাব ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “শীত বা ঠাণ্ডা আবহাওয়াকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা না করলেও, আমরা আগাম তথ্য দিয়ে মানুষকে নিয়মিত সতর্ক করে দিচ্ছি। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা ১০০০ মিটারের নিচে কমে গেলে, কুয়াশার তীব্রতা বেশি থাকায় আমরা সাধারণত কুয়াশার সতর্কতা জারি করে থাকি।এ ধরনের সতর্কতার মাধ্যমে মূলত যানবাহন চলাচলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।তিনি বলেন, আমাদের বারবার সতর্ক করার পরও দেশের মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে না। শীত মোকাবেলা করতে হয়।এ কারণে মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শীতে ভুগলেও কেনা হয়নি কম্বল: প্রতি বছর কনকনে শীতে ভুগতে থাকা দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কম্বল কেনে। এবার কম্বল কেনার জন্য ২৬ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। নুরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত দরপত্রে অধিদপ্তরের পরিচালক (ত্রাণ) মো. প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কম্বল কিনতে পারেনি বিভাগ। এসব কম্বল কেনার জন্য দুই দফা পুনঃদরপত্রও করা হয়। কেন কেনা হয়নি তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। বিভাগ কম্বল কিনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন জেলা প্রশাসকদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ত্রাণ) মোঃ নুরুল হক চৌধুরী বলেন, কম্বল কেনার প্রক্রিয়া চলছে। কত পিস কেনা হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেক প্যাকেজ আছে। ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে।’ শীতের পরও কম্বল কিনতে এত দেরি কেন সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফোনে এত কিছু বলা যাবে না। আমি সরাসরি এলে ব্যাখ্যা করব।’
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমি আজ এখানে যোগ দিয়েছি। সব তথ্য এখন বলা যাবে না। যতদূর জানি বিভিন্ন জায়গায় বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। উত্তরাঞ্চলসহ যেসব এলাকায় শীত বেশি হয় সেসব এলাকায় ১০.০০০ পিস কম্বল চলে যাবে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
অধিদফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২ জানুয়ারি থেকে শীতবস্ত্র কিনতে ছয় জেলা প্রশাসকের কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ফেনী, খুলনা, নীলফামারী ও সাতক্ষীরায় ১০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া চলতি শীতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৬৪টি জেলায় ২৬ লাখ ৩৩ হাজার কম্বল পাঠানো হয়েছে।
সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও প্রতিবছর শীতার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এগিয়ে আসলেও এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায় সংকট রয়েছে। মানুষের টাকা নেই। অনেকেই আগের মতো মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারছেন না।
এদিকে সরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাদ্দকৃত কম্বল ফেরত দিয়েছেন। চেয়ারম্যানরা জানান, শাহজাদপুরের ১৩টি ইউনিয়নে অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য ৩৫০ পিস কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।