শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও নিবন্ধনের আবেদন বেশি, বরাদ্দ কম
দীর্ঘদিন পর আবারও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওর (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও) জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছিল। গত ১০ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ অক্টোবর। এবার সারাদেশে আট হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো লেভেল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। এখন চলছে আবেদন যাচাই-বাছাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে এই মুহূর্তে এমপিওভুক্তির যোগ্য সরকারি স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে আট হাজারের বেশি। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছয় হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নতুন এমপিওভুক্তির আশা করছেন। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের মাসিক বেতনের একটি মূল অংশ সরকারের কাছ থেকে পান এবং এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এ ছাড়া দুই ঈদে শিক্ষকরা পান বেতনের ২৫ শতাংশ। মূল বেতন ও কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ-সংশ্লিষ্ট কমিটি ইতোমধ্যে তিন ক্যাটাগরিতে আবেদন বাছাই শুরু করেছে। ১৫ নভেম্বর কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরিন বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও নিবন্ধন নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০২১ অনুযায়ী প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনটি প্রধান মানদণ্ড বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি অনেক প্রতিষ্ঠান জাল নথি দিয়ে আবেদন করেছে, যা দুঃখজনক। কতগুলো আবেদন জমা পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতগুলো আবেদন জমা পড়েছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কত প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হবে। এটা নির্ভর করে বাজেট বরাদ্দের ওপর। সরকার চাইলে বাজেট বাড়াতেও পারে। কমিটি থেকে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে সরকারের কাছে জমা দেব। সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
জানা গেছে, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুটি যোগ্যতা থাকলে এমপিও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে। একটি হলো সরকারি স্বীকৃতি, অন্যটি হলো নিজস্ব জমিতে নিজস্ব অবকাঠামো থাকা প্রতিষ্ঠান। তবে এবার অনেক অস্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করেছে। এ নিয়ে বাছাই কমিটির সদস্যরাও বিব্রত। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওইসব সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা রয়েছেন। হয়তো রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে সংগঠনটি এমপিওভুক্তি পাবে বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু এবার তার কোনো সুযোগ নেই।
তিনটি মানদণ্ডে ১০০ নম্বরে মূল্যায়ন: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতবারের মতো এবারও বিশেষায়িত স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারে এমপিওর আবেদন স্ক্রিন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং (বুয়েট) কর্তৃক উদ্ভাবিত এই বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও নিবন্ধনের আবেদন এসেছে এবং বাছাই চলছে। এটি তিনটি প্রধান মানদণ্ডে ১০০ নম্বরে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনটি বিভাগে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে গ্রেডিং হবে। মানদণ্ড হল: শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), প্রার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০নম্বর)।
এমপিও নীতি-২০২১-এ এমপিওভুক্তির জন্য পাঁচটি স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্তরগুলি হল: নিম্ন মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম), মাধ্যমিক (নবম থেকে ১০ম), উচ্চ মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ থেকে ১২তম), কলেজ (১১ম থেকে ১২তম), স্নাতক (পাস) এবং ডিগ্রি কলেজ (১১ম থেকে ১৫তম)।
এমপিওভুক্তির আবেদন করা স্কুল-কলেজ নির্বাচনের জন্য ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরিন এনডিসি। কমিটির সদস্যরা হলেন ব্যানবেসের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার যুগ্ম সচিব, বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব, মাউশির প্রশাসন শাখার পরিচালক, ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক, বাজেট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. বিভাগ আর কমিটির সদস্য সচিব হবেন মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার উপসচিব মো. যাচাই-বাছাই কমিটিকে সহায়তা করতে চার সদস্যের একটি উপ-কমিটিও গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শুধুমাত্র সকল শর্ত পূরণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হবে।