• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের শেষদিনে হাজারো মানুষের ঢল

    বিশ্বব্যাপী চলা সংঘাত, হানাহানি থেকে বেরিয়ে হোসাইনি আদর্শের মানবিক ইসলাম প্রতিষ্ঠার আহবানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল। অবক্ষয়ে নিমজ্জিত তারুণ্যের শক্তিকে ইসলামের ধাঁচে গড়ে তোলা, কারবালার মর্মস্পর্শী ঘটনা ও নবী পরিবারের আত্মত্যাগের কাহিনি সর্বস্তরের পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি ওঠেছে মাহফিল থেকে।  

    চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় দশদিন ব্যাপী ৩৮ তম শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের আয়োজন করে মাহফিল পরিচালনা পর্ষদ। গত শনিবার (২৯ জুলাই) সমাপনী দিনে হাজারো আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের ঢল নামে। মাহফিলে দেশবাসীর শান্তি সমৃদ্ধি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সংহতি ও বৈশ্বিক শান্তি কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।  শুরুতেই প্রচার সম্পাদক দিলশাদ আহমেদ এর নিমানকৃত বিগত মাহফিলগুলোর  উপর চমৎকার একটি ভিডিওচিত্র প্রদশিত হয়।   

    সমাপনী দিনের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিদেশি আলোচক ছিলেন ইরাকের বাগদাদের বড় পীর সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রা) এর সরাসরি বংশধর  আল্লামা সৈয়দ আফিফ আবদুল কাদের মনসুর আল জিলানী (মাজিআ)। 

    কারবালা ময়দানে ইসলাম দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ) হাতে মানবিক ইসলামের পতাকা, অন্যদিকে ইসলামের আলখেল্লাধারী ইয়াজিদের সহিংস উগ্রবাদী ইসলাম। আমরা হোসাইনি মানবিক ইসলামের পতাকাই ধারণ করি। ইসলামের এই মূলধারার ওপর আমরা প্রতিষ্ঠিত। কারবালার যুদ্ধে মানবতা, শান্তি, সম্প্রীতির মানবিক ইসলামের বিজয় সূচিত হয়েছে; যার নেতৃত্বে ছিলেন নবী বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা)।
    তিনি আরও বলেন, আহলে বায়তে রাসুলের (দ) মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। তাঁদের ভালোবাসা ফরজ। কুরআন মজিদ এবং সুন্নাহ তথা আহলে বায়তে রাসুলকে (দ) আঁকড়ে ধরলে নাজাত মিলবে। তাঁদেরকে মহব্বত বা আনুগত্য না করলে পথভ্রষ্ট হতে হবে। আমরা কুরআন মজিদ শুধু পড়ি না। চিন্তা গবেষণাও করি। আর কুরআন মজিদের পয়গামই হচ্ছে আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মহব্বত।

    মাতা-পিতার খেদমত, সমাজে সালামের প্রসার ঘটানো এবং স্ত্রী-সন্তানদের ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তবেই আপনাদের ওপর আল্লাহ পাক মেহেরবানি করবেন। ইমাম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বলের (রা) দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, যিনি মানুষকে ভালোবাসেন তিনিই প্রকৃত আল্লাহওয়ালা। আপনারা সব সময় আল্লাহর জিকির করবেন। এতে সকল পেরেশানি, দুঃখ দুর্দশা দুর হবে, রিজিক বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আল্লাহ পাকের কুদরত থেকে আপনারা মেহেরবানি পাবেন। জিকির, সবর, নেক্কার স্ত্রী, কৃতজ্ঞতাপূর্ণ অন্তর তথা শোকরগুজারি এই চারটি বিষয়কে ইসলাম বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। ১০ দিনব্যাপী শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে সহযোগিতাকারী সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
    আহলে বায়তে রাসূল (দ) আমাদের নাজাত ও মুক্তির ঠিকানা বিষয়ে আলোচনা করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন । শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরীর (রহ) জ্যেষ্ঠ সন্তান ব্যারিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম। তিনি বলেন, আমার আব্বাজান কেবলা (রহ) আমাদেরকে ঈমান আক্বিদার দীক্ষা দিয়ে গেছেন। এই মাহফিল তাঁর বড় অর্জন। এজন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

    অতিথি ছিলেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, আনজুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহম্মদমেহসিন, পিএইচপি ফ্যমিলির পরিচালক আমীর  হোসেন সোহেল।  কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী আহমদ বিন ইউসূফ আল আজহারী। মসজিদের নিচতলায় হাজারো মহিলা মাহফিলের আলোচকদের বক্তব্য শোনেন।

    মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষস্থানীয়সহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন ও আওলাদগণ, বিভিণ্ণ মসজিদের  ঈমামবৃন্দ, বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমগন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মহফিলের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, খোরশেদুর রহমান, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মুস্তফা, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, দিলশাদ আহমদ,  হাফেজ আহমদুল হক, মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিকদার, মাহাবুবুল আলম, হাফেজ ছালামত উল্লাহ, এস এম শফি, গাজী ইদ্রিচ চেয়ারম্যান, মাইন উদিন মিঠু, মোহাম্মদ ফরিদ মিয়া, শাহাব উদ্দিন, জহির উদ্দিন, খোরশেদ আালী চৌধুরী, নাজিব আশরাফ, মুহাম্মদ আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।