শাহজালাল বিমানবন্দর।পাঁচটি দেশ তৃতীয় টার্মিনাল করতে আগ্রহী
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০২৩ সালের মধ্যে টার্মিনালটি চালু হয়ে যাবে। শুরু থেকেই, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং আউটসোর্স করতে আগ্রহী। সম্প্রতি সংস্থাটির বোর্ড সভায় এ বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে দেশের বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সকে তৃতীয় টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মোটামুটি নিশ্চিত। এতে বিদেশিদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, যাত্রীসেবা ও কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা শুরু থেকেই তৃতীয় টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচকের বোর্ড সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমানকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হযরত শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান। কিন্তু তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তারপরও সময় ও সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেতে হলে তাদের ভালো করতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা বেবিচকের এখতিয়ার। তারা যাকে ভালো মনে করবে তাকেই দেবে। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সূত্র জানায়, বেবিচকের বোর্ড সভায় তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং এ বিষয়ে দুই সদস্যের পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বেশ কয়েকটি দেশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ড প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনো পর্যালোচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান ।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জানায়, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭-এ একনেক শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রাথমিকভাবে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল, পরে প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়িয়ে ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণে অর্থায়ন করছে জাইকা। জাপানের সিমুজি এবং কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যে কোনো বিমানবন্দরের আয়ের অন্যতম উৎস। তৃতীয় টার্মিনালটি চালু হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ হবে এবং বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোনো বিদেশি কোম্পানি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর দায়িত্ব পেলে সেই অর্থ সরকারের হাতে চলে যাবে।
নির্মাণ কাজ শেষ হলে আগামী বছরের শেষ নাগাদ তৃতীয় টার্মিনালটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বক্তব্য, বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। যাইহোক, আমরা আশা করি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০২৩সালের মধ্যে টার্মিনালটি চালু করতে সক্ষম হব। তবে খরচ কতটা বাড়বে তা বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রমের জবাবদিহিতার দায়িত্ব একটি বিদেশি কোম্পানিকে দিতে চাই। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বিমানবন্দরগুলোর অধিকাংশই বিদেশি কোম্পানিগুলো পরিচালনা করে।
সূত্র আরও জানায়, টার্মিনালটি নির্মিত হলে যাত্রী পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, পণ্য লোডিং-আনলোডিংসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ বেসরকারি কোম্পানির হাতে থাকবে। প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, অভিবাসন ও শুল্ক ব্যবস্থা বেবিচকের অধীনে থাকবে। তবে পরামর্শকদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বেবিচক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে দেশের সব বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বেবিচক ও বাংলাদেশ বিমান। হঠাৎ করে একটি মাত্র টার্মিনালের দায়িত্বে কোনো বিদেশি কোম্পানি আসলে কীভাবে সমন্বয় করবে, কী ধরনের সুবিধা-অসুবিধা হবে, সম্ভাব্যতা যাচাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায়, ফলাফল বিপরীত হতে পারে।