শহরে দরিদ্রদের অর্ধেক নতুন।বিআইডিএসের গবেষণা
করোনা মহামারীর সময়ে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর, মোট শহরে দরিদ্রের ৫০ শতাংশ ছিল ‘নতুন দরিদ্র’। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টার কারণে ধীরে ধীরে দারিদ্র্যের হার কমেছে। কিন্তু নতুন দরিদ্রদের অনেকেই এখনও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। আপনি তাদের মনোযোগ দিতে হবে. বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকেদের মধ্যে শিক্ষায় ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণাপত্রে এসব কথা উঠে এসেছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বিআইডিএস ২ হাজার ৪৬টি থানার উপর জরিপ করে এই গবেষণা করেন।
বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আয়োজিত ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালম্যানাক-২০২৩’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বুধবার দারিদ্র্য বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
বিনায়ক সেন বলেন, জরিপে ২৩.৫ শতাংশ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার বলেছে যে মহামারী চলাকালীন তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করতে হয়েছিল। শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে শহুরে দরিদ্ররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে দারিদ্র্য বৃদ্ধি সাময়িক বলে মত দেন বিআইডিএস মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ২০২২ সালের শুরু থেকে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে দারিদ্র্যও কমেছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪.৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩.২ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।
তিনি বলেন, আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা দারিদ্র্য হ্রাসে ব্যাপক অবদান রেখেছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে মোবাইল আর্থিক সেবা দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করেছে। আর সেই সময়ে যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা তা ভেঙে নিজেদের কর্মসংস্থানে ব্যবহার করত।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্ম-কর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩.৬০ শতাংশ। মহামারী পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮.৫৬ শতাংশে। অন্যদিকে, করোনার আগে অত্যন্ত দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.২১ শতাংশে।
মোবাইল আর্থিক পরিষেবার বিষয়ে, নিবন্ধে বলা হয়েছে যে ২০১৯ সালে, ৩৯.২৯ শতাংশ দরিদ্র পরিবার বা পরিবার এই পরিষেবাটি ব্যবহার করেছিল। করোনার পর ২০২২ সালে তা বেড়ে ৭৮.৭৮ শতাংশ হয়।
বিনায়ক সেন বলেন, গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবধান ধীরে ধীরে কমছে। কারণ গ্রামের মানুষও শহরের মতো অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। উভয়ের মধ্যে বৈষম্য কমানোর কথাও বলা হয়েছে সংবিধানে। নগরীতে আয়বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।
উদ্বোধনকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকার আকাশে তারা গণনা কমিটি বা সৈকত বালি কমিটির মতো উন্নয়ন ভাবনাকে বাদ দিতে চায়। বরং তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে সম্পদ তৈরি করতে চায়। এ জন্য সরকার নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক চাকরি ধীরে ধীরে অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। এই উন্নয়ন গত ১০-১২ বছর ধরে দেখা হচ্ছে।
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের সমালোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বৈষম্য দূর করার উপায় রয়েছে। এক সময় রাজনৈতিকভাবে এসব মাধ্যমকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সরকার সামাজিক সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দারিদ্র্য একটি মানবসৃষ্ট অন্যায়। এটা কোনো স্থির বিষয় নয়। সরকার দারিদ্র্য দূর করতে চায়। সব ক্ষেত্রে সব নাগরিককে সমান সুযোগ দিয়ে বৈষম্য দূর করতে চায়।
বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালম্যানাকের এ বছরের থিম হচ্ছে উন্নয়নের সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ। গতকাল প্রথম দিনে পাঁচটি কার্য অধিবেশনে মোট ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার শেষ দিনে আরও ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। দেশ-বিদেশের গবেষকরা এই নিবন্ধগুলো উপস্থাপন করছেন এবং প্যানেল আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। শিক্ষাবিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করছেন।