শয্যা খালি নেই, মেঝেতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমএইচ) হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগের ষষ্ঠ তলার সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেঝেতে চিকিৎসাধীন আমানুল্লাহ আমান (২০)। নিউমার্কেটের নৈশ প্রহরী চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। শনিবার সকালে তাকে ভর্তি করা হয়। ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চাটাই রয়েছে। মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখতে আসে। কবে শয্যা পাবে জানে না।
রোববার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমনের মতো অসংখ্য ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। আগে এসব ওয়ার্ডের এক কোণ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সংরক্ষিত থাকলেও এখন বেহাল দশা। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য দেওয়া নির্দেশনা এখানে মানা হয় না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে অনেকেই বারান্দার মেঝে, সিঁড়ির কোণে, লিফটের সামনের মেঝে ও টয়লেটের সামনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের পঞ্চম থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগে এসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও এখন নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পঞ্চম তলার বারান্দায় কিছু শয্যা আছে, তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় নেই। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে রোগীদের জন্য মশারি দেওয়া হচ্ছে না। ভবনের বিভিন্ন স্থানে রোগীর স্বজনরা পানি ফেলছেন। ভবনের বিভিন্ন কোণায় পুরনো আসবাবপত্র স্তূপ হয়ে আছে। প্রশাসনিক ভবনের মাঝখানে জমে থাকা পানিতে মশার উৎপাত।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোস্তাকিম বিল্লাহ চকবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও জ্বরের উন্নতি না হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন মেঝেতে থাকার পর গত বুধবার ওয়ার্ডের বারান্দায় শয্যা পান। সঙ্গে থাকা মা জানান, তার ছেলের স্কুলের অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখানে ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানাসহ নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয় না। মাধ্যমিক ছাত্র. ফারদিন (১৫) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। তাকেও একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার বাবা ফয়সাল জানান, এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী আলাদা করা হয়নি। এমনকি তারা মশারিও টানাচ্ছেন না। ফলে ছেলেকে নি ভয়ে আছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই হাসপাতালে মাত্র ২৮ জন ডেঙ্গু রোগী ছিল। এরপর গত জুলাইয়ে রেকর্ড ১ হাজার ৮৭৫ জন ভর্তি হন। আর চলতি আগস্টের ১৫ তারিখে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৫ জন। জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি, তবে জুলাই মাসে ৩৬ জন এবং এই মাসের ১৫ দিনে ২৫ জন মারা গেছে।
ডিএমকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্নার রয়েছে। তবে প্রতিদিন এত রোগী আসছেন, জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অন্যান্য রোগীরাও এসব ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আমরা প্রতি তলায় ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা জায়গা রাখার চেষ্টা করছি। আপাতত আলাদা ওয়ার্ড করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীদের চলাচলের সুযোগ নেই। হাসপাতাল থেকে মশারি সরবরাহ ও টানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গরমের কারণে অনেকেই টাঙ্গান না। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ফলে হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার খুবই কম।
ডিএমইসি কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৩৬৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৫৪ জন। এ বছরে মারা গেছেন ৬৮ জন।