লোডশেডিং মোকাবিলায় তেলের ওপর নির্ভরশীলতা। আদানি অর্ধেক, মাতারবাড়ি বন্ধ
কয়লা সংকটের কারণে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে, বকেয়া বৃদ্ধির কারণে ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হয়ে গেছে। অন্যদিকে ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ আসছে এস আলমের বাঁশখালী (এসএস পাওয়ার) ও রামপাল থেকেও। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় লোডশেডিং মোকাবিলায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
দেশের প্রধান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একমাত্র পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রই পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে। পটুয়াখালীর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি ক্রমাগত পূর্ণ ক্ষমতায় (কম-বেশি ১২৪৪ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ নিচ্ছে। গতকাল শনিবার দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে দেশে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। এ সময়ে লোডশেডিং হয়েছে ২০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট। যা আগের কয়েক দিনের তুলনায় কম ছিল। এর আগে শুক্রবার রাতে দেশে সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ১৬৮৫ মেগাওয়াট এবং বৃহস্পতিবার রাতে ১৫৭৬ মেগাওয়াট। এ ছাড়া দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে কমবেশি লোডশেডিং ছিল।
দেশের প্রধান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা, বাগেরহাটের রামপাল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী এসএস পাওয়ারের স্থাপিত ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পায়রা গ্রিডে ১২৪৪ মেগাওয়াট, রামপাল ১২৩৪ এবং এস আলম ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। আর মাতারবাড়ীতে স্থাপিত ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্রিডে ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টই পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন ।পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে একটানা ১২০০-১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট ২০২০ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। রক্ষণাবেক্ষণের সময় ছাড়া সব সময়ই এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। কোন সমস্যা নেই। তিনি বলেছেন যে কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে নির্মাতাদের (সিএমসি) সাথে কথা বলেছে। তারা (চীনা নির্মাতারা) বলেছে, ‘টেকসই, কোনো সমস্যা নেই’।
পিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয় ২৪ অক্টোবর। ওই দিন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে ১৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় পরের দিন কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট যথাক্রমে ডিসেম্বর ২০২৩ এবং জুলাই ২০২৪ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং স্টেট কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অর্থায়নে কারখানাটি নির্মিত হয়েছে।
এদিকে কয়লার অভাবে রামপাল ও বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে। এদিকে এস আলমের বাঁশখালীর একটি ইউনিটও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রামপাল নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে এই কোম্পানিটি গঠিত হয়।
এস আলমের অধীনে ৬টি কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানা দুটি চীনা কোম্পানির।
অন্যদিকে, ভারতের আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেড (এপিজেএল) তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংকটের সময় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে।