লোডশেডিং নিয়ে জনরোষের আশঙ্কায় জাপাকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর
লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় জনরোষের আশঙ্কা করছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। তবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সবাইকে সপ্তাহ দুয়েক ধৈর্য ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের বৈঠকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদনের দাবিতে কাটা প্রস্তাবের আলোচনায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি গুরুত্ব পায়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা দাবি করেছেন। তার দাবিতে বিরোধী দলের ১০ জন সদস্য ছাটাইয়ের প্রস্তাব দেন। তবে আলোচনায় অংশ নেন পাঁচজন, অন্যরা অনুপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার, কিন্তু আমরা ২৬ হাজার মেগাওয়াট করেছি। এখন উৎপাদন হচ্ছে সাত হাজার মেগাওয়াট। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখন দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং আছে, তা আরও বাড়বে। গণমাধ্যমে দেখা গেছে ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ এসেছে। ২০ হাজার কোটি টাকা এখনও বাকি। ক্যাপাসিটি চার্জ এত বেশি কেন? কেন চুক্তিটি এমনভাবে করা হয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে?
তিনি আরও বলেন, বিএনপির সময় বিদ্যুৎ ছিল না, খুঁটি ছিল। এখন বিদ্যুৎ আছে নাকি কোনো খুঁটি নেই। গরমে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। মানুষ মুঘল আমলের চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি ক্ষেত্র ছিল বিদ্যুৎ। এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এতে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকলে দেশের অগ্রগতি থমকে যাবে। কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। সর্বত্র স্থবিরতা বিরাজ করবে। কয়লা বা ডিজেল আগে আমদানি করা গেলে এ সমস্যা হতো না। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। দ্রুত গতিতে কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে হবে।
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেছেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ খাত হুমকির মুখে। ১০ বছর পর আমাদেরও গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। জাফর রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বিদ্যুৎ যাচ্ছে; কিন্তু মন্ত্রীর কিছু বলার নেই। গণশুনানির মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। কোথায় অব্যবস্থাপনা আছে, সেটা দেখতে হবে।
সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, কোভিডের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। স্বাস্থ্যের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই। আগে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, তখন থেকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট হঠাৎ করেই। যেকোনো মুহূর্তে ২০ থেকে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এর জ্বালানি দরকার। করোনার কারণে প্রতিটি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বে সব কিছুর দাম বেড়েছে। গ্যাস ও তেল পাওয়া যেত না। তা সত্ত্বেও কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি রাখা যায়, তা চলছে। অর্থনৈতিকভাবে কতটা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় সেটাই চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববাজারে কী ঘটবে তা কল্পনাও করা যায় না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দিনে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পিক আওয়ারে সন্ধ্যায় ১৪,০০০ থেকে ১৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিং বেশিদিন থাকবে না। এই আকস্মিকতার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, অনেকেই বিল দিচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের বিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। করোনার সময় বিল নেওয়া হয়নি। প্রতি বছর জ্বালানি খাতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তেল ভর্তুকি দেওয়া হয় না. কিন্তু গ্যাস ভর্তুকি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ বছর ২৪ থেকে 27 হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি যাবে বিদ্যুৎ খাতে। সরকার সমন্বয় করতে পারত; কিন্তু তা করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী চান সবাই বিদ্যুৎ পান। এজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সময়মতো কয়লার এলসি করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিবেচনায় আমরা যথাসময়ে কয়লা আনতে পারিনি। এ কারণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারখানাটি চালু হবে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে, রামপাল চলছে, এসএস পাওয়ার চালু হবে। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছি। আরো আনব। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থ সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। এটা বেশিদিনের জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ধৈর্য্য ধরে বিশ্ব ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখি তা কাটিয়ে উঠতে পারি।