• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাত, সেচের সংকট

    গরমে মানুষ বসবাস করছে। এদিকে বিদ্যুতের ভোগান্তি বেড়েছে। গত কয়েকদিনে বিদ্যুত উৎপাদনে রেকর্ড থাকলেও গরম বাড়ায় এসি ও ফ্যান বেশি চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এছাড়া রমজান ও সেচ মৌসুমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

    ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় দিনে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে মানুষ রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। ঈদের আগে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। তাপমাত্রা না নামলে দুর্ভোগ কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

    বিশ্ববাজারে দাম বেশি থাকায় গত বছর গ্যাস ও তেলের আমদানি কমিয়ে দেয় সরকার। ফলে সরকার লোডশেডিং ঘোষণা করে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। ফলে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস বিদ্যুতে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগে তা ছিল ৮০-৮৫ কোটি ঘনফুট। ফার্নেস অয়েলের দামও কমেছে। এছাড়া কয়লাভিত্তিক কিছু নতুন প্ল্যান্ট উৎপাদনে এসেছে। এতে চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই চাহিদার কাছাকাছি ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে খুব একটা লোডশেডিং হয়নি।

    এক সপ্তাহের পর থেকে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং। গত ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট। সে সময়ও ৩০৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ৭৭৬ মেগাওয়াট। ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট।

    বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। শনিবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ৮৯৬ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত লোডশেডিং বেশি। সূত্র জানায়, শনিবার বিদ্যুতের ঘাটতি ২৫০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। বিদ্যুত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্ল্যান্টটি বন্ধ রয়েছে।

    জানা গেছে, গ্যাস ও জ্বালানি তেল সংকটের কারণে এবং কেন্দ্র মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শনিবার ৪ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট ও ২ হাজার ৬৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। স্টেকহোল্ডারদের মতে, গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে গড়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে প্রায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।

    গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। দিনরাত সব সময়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে দিনে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। তবে সে তুলনায় ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর অবস্থা ভালো।

    খুলনা নগরীর শেরেবাংলা ফিডারের অন্তর্গত শেখপাড়া পুরাতন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ইয়াছির আরাফাত জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা, দুপুর ২টা ৩১ মিনিটে এবং রোববার ভোর সাড়ে ৫টা ও সাড়ে ১২টায় লোডশেডিং হয়। pm প্রতিবার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।

    দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পশ্চিমাঞ্চল পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কেন্দ্রে সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। খুলনার কয়রা উপজেলার কালনা বাজারের ব্যবসায়ী মহসিন মোল্লা জানান, দিনে-রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবারই এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এটি দোকানের ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট করে।

    দুই দিন ধরে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে নগরীর বর্ধিত অংশে বিদ্যুৎ আসছে-যাচ্ছে। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, আধাঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে ঈদের আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। বরাদ্দ প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট।

    কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে দিনরাত এক থেকে দেড় ঘণ্টা একটানা লোডশেডিং চলছে। নগরীর গড়িয়ালপাড়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, রোববার বিকেল ৪টার দিকে সেহরি খাওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে ফজরের নামাজের সময় বিদ্যুৎ আসে। বিকেল ৫টার দিকে আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। জেলা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন জ্যোৎস্না বেওয়া বলেন, সকালে বিদ্যুৎ নেই। ঘরের বাইরের গাছে বাতাস নেই। বাতাসে ফ্যানিং।

    ফরিদপুরে শনিবার রাত ১১টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। রোববারও দিনভর লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে।

    মন্তব্য করুন