রূপপুরের পণ্যবাহী রুশ জাহাজ যাচ্ছে চীন।রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার জাহাজ পাঠাবে আশা করিনি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ যন্ত্রপাতি নিয়ে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’ অবশেষে চীনে যাচ্ছে। বাংলাদেশে পণ্য আনলোড করতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারি করা জাহাজ ভারতে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে চীনে যাওয়ার পথে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ আশা করেনি যে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা পাঠাবে। জাহাজের মালামাল খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজগুলো ছাড়া অন্য জাহাজে পণ্য পাঠাতে আমরা রাশিয়াকে বলেছি। নিষেধাজ্ঞার জাহাজ গ্রহণ করতে চান না. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের আশ্চর্য, রাশিয়া জেনেশুনে জাহাজের নাম পরিবর্তন করেছে।
১৫ জানুয়ারি গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় অংশের মাঝখানে নোঙর করা হয়েছিল। এটি সিয়ান্টো বন্দর, চীন এর পথে যাত্রা করছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি জাহাজটি এই বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জাহাজের কার্গো খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটম বলেন, সময়মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশীদারের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে সেরা লজিস্টিক রুট খোঁজাও অন্তর্ভুক্ত।
উরসা মেজর জাহাজটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পণ্য নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে আসার কথা ছিল। তবে, ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে জাহাজটি আসলে উর্সা মেজর নয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এটি ‘Sparta 3A’ জাহাজ। রং ও নাম পরিবর্তন করে রূপপুর থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে জাহাজটি। জাহাজটির ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO) সার্টিফিকেট নম্বর হল ৯৫৩৮৮২, যা আসলে ‘Sparta 3A’-এর সার্টিফিকেট নম্বর। যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং জাহাজটিকে বন্দরে প্রবেশে নিষেধ করে।
বাংলাদেশে পৌঁছাতে না পেরে চলতি মাসে জাহাজটি ভারতের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। ভারতে পণ্য খালাস না করা গেলেও জাহাজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পণ্য সরবরাহের জন্য নিয়োগকৃত ঠিকাদার ভেবেছিল তারা ভারতে পণ্য আনলোড করে বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পণ্যটি ভারতে ছাড়ার অনুমতি না থাকায় তা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চান, রুশ জাহাজ ফেরত আসায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে কি না। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটু দেরি হবে। ভারতে মুক্তির কথা আছে। আমাদের কাছে এমন কোনো বার্তা ছিল না। এটা বাণিজ্যিক বিনিময়ের ব্যাপার। একটি আইনানুগ পদ্ধতিতে আমাদের কাছে সরবরাহ করা সরবরাহকারীর দায়িত্ব। আশা করি এটা হবে. যারা এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন তারা দেখবেন এই প্রকল্পের গতি কমবে কি না। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজটি বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। একই কারণে ভারতে পণ্যটি খালাস করা যায়নি।